সরকারকে বিদায় করা ছাড়া দেশকে রক্ষা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেছেন, সমস্ত বন্ধু দেশগুলোকে আপনারা (সরকার) বৈরী শত্রুভাবাপন্ন করে তুলছেন। তারা যদি আজকে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমাদের অর্থনীতি ও রপ্তানি বাণিজ্য ভেঙে পড়বে। তাই এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। এই সরকার দেশের মানুষকে একটি ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাকি এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না৷ এই কথা বলার পরে আওয়ামী লীগের নেতারা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। এতদিন তারা বলে আসছিলেন, সারা পৃথিবী নাকি সরকারের সঙ্গে আছে৷ এবার প্রধানমন্ত্রীর ১৫ দিনের বিদেশ সফরের পর দেখা যাচ্ছে, তাদের মন খুব খারাপ ও কপালে চিন্তার ভাঁজ। বিদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী উপযুক্ত প্রোটকল ও কোনো মর্যাদা পাননি। তাই ঢাকায় ফিরে এসে তিনি মনের ক্ষোভ ও দুঃখে আকস্মিকভাবে ছয়টি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের প্রটোকল প্রত্যাহার করেছেন।
‘প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে আমরা আর কিছু কিনব না। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কী সর্বনাশ হবে এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। এমন হলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। হাজার হাজার গার্মেন্টস ও কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে। প্রধানমন্ত্রী কি এদের দায়িত্ব নিতে পারবেন?’
‘সরকারের এখন খুব মন খারাপ। কারণ প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন মার্কিনিরা, বিদেশিরা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবারও তাকে সমর্থন করবে। বিনা ভোটের দখলদার সরকার ক্ষমতায় থেকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আগামী নির্বাচনও পার করবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সম্মতি পাওয়া যায়নি। এজন্য তিনি ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছেন। ফিরে এসেই তিনি একের পর এক বেসামাল বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা সরকারের যে বেসামাল পরিস্থিতি ও অস্থিরতার একটি বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আরেকবার ২০১৪-২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হতে দেবে না। দেশের মানুষ এবার তার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করবে, মর্যাদা রক্ষা করবে। কারণ আগামী নির্বাচন ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশ এটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। আজকে দেশের গরীব, শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষরা ভালো নেই। তারা একবেলা খেলে আরেকবেলা কীভাবে খাবে এর নিশ্চয়তা নেই। তারা যে মজুরি পান, তা দিয়ে এই বাজারে ১৫ দিন চলাও অসম্ভব। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠা হিসাব দিয়েছে, আজকে অতিদরিদ্র্য ও না খাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। শ্রমজীবী-মেতনতি মানুষের পুষ্টিহীনতার সংকট দেখা দিয়েছে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শ্রমজীবীরা বলছেন, বাজারে গেলে মনে হয় না দেশে কোনো সরকার আছে। সকালে এক দাম, দুপুরে এক দাম, বিকেলে আরেক দাম, মধ্যরাতে আবার তারা দাম বাড়িয়ে দেয়৷ বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। সরকার মুনাফাখোর সিন্ডিকেটদের ওপর পুরো বাজারের ভার তুলে দিয়েছে। প্রতিদিন সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব সিন্ডিকেট মুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ী। এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, কারণ সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ আছে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। এতে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বিহ্নিশিখা জামালী, খেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকবর খান, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির প্রস্ততি কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আবু হাসান টিপু, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম ফয়েজ হোসেন, বিপ্লবী কৃষক শ্রমিক সংহতির সভাপতি আনছার আলী দুলাল, শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু ব্যাপারী বিন্দু, বিপ্লবী রিকশা শ্রমিক সংহতির সভাপতি জামাল শিকদার ও বিপ্লবী পদুকা শ্রমিক সংহতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।