বগুড়ার প্রধান ডাকঘরের ভল্ট ভেঙে আট লাখ টাকা লুট এবং অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শফিকুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুর ১২টায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
এর আগে, বুধবার (৩ মে) জেলা পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ভারত-সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শফিকুলকে গ্রেফতার করে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ডাকাতির ঘটনায় একজনই জড়িত। শফিকুল ভারত ও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) ছাড়াও নওগাঁর সাপাহার, পত্নীতলা, পোরশা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানায় ডাকাতির মামলা রয়েছে।
শফিকুল নওগাঁর সাপাহার উপজেলার পশ্চিম করমডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার গ্রেফতার শফিকুলের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রজেক্টরের মাধ্যমে নানা তথ্য-প্রমাণ ও সিসিটিভির ফুটেজ তুলে ধরেন।
গ্রেফতার আসামির কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
থানা-পুলিশ জানায়, গত ২৩ এপ্রিল রাতে বগুড়ার সাতমাথায় প্রধান ডাকঘরে অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্যকে হত্যা করা হয়। এ সময় ভল্ট ভেঙে আট লাখ টাকা লুট করা হয়। ট্রেজারির ভল্টে ৪৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা রাখা ছিল। ঘটনার পরদিন প্রধান ডাকঘরের পোস্ট অফিস পরিদর্শক (শহর) মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে সাতজনকে আসামি করে হত্যা ও ডাকাতির মামলা করেন। নিহত প্রশান্ত কুমারের বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া হিন্দুপাড়ায়।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ডাকাতির প্রায় দেড় মাস আগে গত ১২ মার্চ শফিকুল ইসলাম মোটরসাইকেল চালিয়ে নওগাঁ থেকে বগুড়া শহরে আসেন। এ সময় প্রধান ডাকঘরে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি শফিকুলের নজরে আসে। এরপর প্রধান ডাকঘরে ডাকাতির পরিকল্পনা ও ভল্ট ভেঙে টাকা লুট করার পরিকল্পনা করেন তিনি। ওই দিনই ডাকঘর ঘুরেফিরে দেখেন তিনি। ১৫ মার্চ পুনরায় বগুড়ায় এসে প্রধান ডাকঘরে ডাকাতি এবং ভল্ট ভাঙার নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন। শহরের একটি মেশিনারিজ দোকান থেকে ভল্ট ভাঙার যন্ত্র কেনেন তিনি।
সুদীপ কুমার দাবি করেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে বগুড়ার সাতমাথা এলাকায় ঘোরাফেরা করেন শফিকুল। ২১ এপ্রিল দিবাগত রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে সীমানাপ্রাচীর টপকে ডাকঘরের চত্বরে প্রবেশ করে মসজিদ ও গ্যারেজের পাশে অপেক্ষায় থাকেন। সকালে নৈশপ্রহরী টয়লেটে গেলে শফিকুল ভেতরে ঢুকে দোতলার সিঁড়িঘরে অবস্থান নেন। বেলা সোয়া ১টার দিকে জানালার গ্রিল ভেঙে ভল্ট রুমে প্রবেশ করেন এবং সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেন। কিন্তু টাকা লুট করতে ব্যর্থ হয়ে বের হয়ে নওগাঁয় ফিরে যান।
সুদীপ কুমার আরও বলেন, ঈদের পরদিন বাসযোগে শফিকুল আবারও বগুড়া শহরে আসেন। আনুমানিক দিনগত রাত ২টার দিকে প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে কাটা গ্রিল দিয়ে ডাকঘরে প্রবেশ করেন। কলাপসিবল গেটের কাছে সিসিটিভি ঘুরিয়ে দেন। সেদিন অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য দায়িত্বে ছিলেন। কক্ষের তালা কাটার শব্দে প্রশান্ত জেগে যান। এ সময় শফিকুলকে ধরতে তিনি ধস্তাধস্তি করেন। একপর্যায়ে শফিকুল তার হাতে থাকা লোহার পাইপ দিয়ে প্রশান্ত আচার্যের মাথায় আঘাত করেন। পরে হাত বেঁধে গলা টিপে তাঁকে হত্যা করেন। এরপর ভল্ট ভেঙে টাকা লুট করে ব্যাগে নেন। এরপর সকালে গেট বাইরে থেকে লাগিয়ে বাসে নওগাঁয় ফিরেন। ওই দিনই নওগাঁর ২টি ব্যাংকে ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জমা দেন। লুণ্ঠিত বাকি টাকার কোনো হদিস মেলেনি।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শফিকুল ইসলাম ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া জন্য গ্রেফতার আসামিকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছে।