বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানব সেবা অভিযান অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও বার্ষিক সেবা অনুষ্ঠান এর মধ্যে দিয়ে দুঃস্থ ও অসহায় ব্যাক্তিদের সেবা প্রদান করে। মানব সেবা অভিযান সংস্থার আয়োজনে বুধবার নগরীর সিএন্ডবি এলাকার একটি দরবার হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মানব সেবা অভিযান সংস্থার সভাপতি আরিফ আহম্মদ চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূরুল আলম, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজশাহীর জেনারেল ম্যানেজার মীর হাসান মোহাঃ জাহিদ।
এছাড়াও রাজশাহী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ওয়াসিম মোঃ মেসবাহুল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাবনা জেলার উপপরিচালক রাশেদুল কবির, অত্র সংস্থার উপদেষ্টা জায়তুনা খাতুন, সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার জাহান বাবু, প্রধান নির্বাহী খাইরুল আলম, পরিচালক অর্থ ও হিসাবআসাদুজ্জামান, পরিচালক অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা ও পরিদর্শন মেহনাজ মুস্তারিনসহ সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মীবৃন্দ ও উপকারভোগিগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মানব সেবা অভিযানের সৃষ্টি ও বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে তুলে ধরেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার জাহান বাবু। তিনি বলেন এই সংস্থা ১৯৮৬ সালে ১১জন শিশু কিশোরের মাত্র ১১টাকা নিয়ে পথ চলা শুরু করে। এরপর ১৯৯৯ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে সংস্থাটি জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীলতার লক্ষে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে। সেই থেকে সংস্থাটি নানা রকম সেবা কার্যক্রম করে আসছে। আগামীতেও সকল কর্যক্রম চলবে চলমান থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মানব সেবা অভিযানের প্রধান নির্বাহী খাইরুল আলম মুকুল। তিনি বলেন, ঋণ কার্যক্রমের পাশাপাশি এই বার্ষিক সেবা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে সকল সেবা প্রদান হয়েছে তা হলো-সুদমুক্ত শিক্ষা ও প্রতিবন্ধী ঋণ, বঙ্গবন্ধু উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি, মাসিক ও এককালীন মেমোরিয়াল শিক্ষা বৃত্তি, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সহায়তা, দুস্থ ও অসহায় মহিলাদের মধ্যে সেলাই মেশিন প্রদান, হুইল চেয়ার প্রদান, দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা প্রদান, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, যাকাত তহবিল, এতিম ও দুস্থ মেয়েদের বিবাহ অনুদান, বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা, করোনা মহামারীতে অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, ধর্মীয় উৎসবে খাদ্য উপকরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান, শীতবস্ত্র প্রদান এবং সবুজায়নের লক্ষে বিভিন্ন এলাকা সমুহে ফলদ ও বনজ গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, জুলাই ২০২২ হতে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত মোট ১৯৩৯ জনের মধ্যে ২১,১০,৮০০/-(একুশ লক্ষ দশ হাজার আটশত) টাকার সেবা প্রদান করা হয়েছে। এই ধরনের কার্যক্রম আগামীতেও চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত, বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান তাঁদের উচিত দুস্থ মানুষের সেবায় কিছু কাজ করা। আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ অর্থনৈতিভাবে অনেক অস্বচ্ছল। তিনি বলেন, সমাজের-এই মানুষগুলো যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা স্বাবলম্বী হতে পারে তবে তাঁরা একেকজন সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে। তবেই সফল হবে বাংলাদেশ। বক্তব্য শেষে উপস্থিত সেবা গ্রহিতাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য বুধবার সুবিধাভোগিদের মধ্যে মাসিক মেমোরিয়াল শিক্ষা বৃত্তি ১১ জনকে ২৭,৫০০/- টাকা, বঙ্গবন্ধু উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি ৫ জনকে ১৫,০০০/- টাকা, শিক্ষা সহায়তা বাবদ প্রদান ৮৩ জনকে ৩০০০ টাকা করে ২,৪৯,০০০/- টাকা, চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ৮১ জনকে ২,৬৭,০০০/- টাকা, ৪৪ টি হুইল চেয়ার বিতরণ, ১৩ সেলাই মেশিন বিতরণ এবং সর্বপরি ৭ জনের মাঝে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে মিটার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করা হয়।