গবেষণায় দেখা গেছে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের ৭০ ভাগের বয়স ১৭ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
সোমবার (২ জানুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আল কায়েদা ও তালিবানপন্থি ৬ হিজরতকারীকে টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের ৭০ ভাগের বয়স ১৭ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। এই বয়সীদের দ্রুত রডিক্রালাইজড করা যায়। তাই জঙ্গিরা কম বয়সী তরুনদের খোঁজে থাকে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে জঙ্গিদের দেয়া ভিডিও কনটেন্টে লাইক কমেন্ট করলেই তাদের টার্গেট করে জঙ্গিরা।
আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো সাইবার স্পেসে অনেকটাই সক্রীয়। তারা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্য নির্বাচন করেন। তারা সাইবার স্পেছে তাদের যে নিজস্ব সাইট ও প্লাটফর্ম আছে সেখানে ইনক্রিপমেন্ট এ্যাপসের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন রেডিক্যালাইজড কনটেন্ট ব্যাপক ভাবে প্রচার প্রচারণা চালায়। এই প্রচার প্রচারণায় উদ্বুধ্য হয়ে যারা লাইক বা কমেন্ট করে তাদের মধ্যে থেকে টার্গেক গ্রুপকে এক্সপার্ট জঙ্গিরা সদস্য নির্বাচন করে।
তিনি জানান, আজকে যাদের নিয়ে আমরা কথা বলছি তাদের দলের প্রধান আব্দুর রবের বয়স ২৮ বছর। বাকি সবাই তরুন। এদের বয়স ১৮, ১৯, ২০, ২৩ এর মধ্যে। এতেই বোঝা যায় জঙ্গিদের প্রধান টার্গেট তরুন। এই তরুনদের দ্রুত রেডিক্যালাইজড করা যায় বলেই জঙ্গিরা তাদের টার্গেট করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দলনেতা আব্দুর রব (২৮), মো. সাকিব (২৩), মো. শামীম হোসেন (১৮), মো. নাদিম শেখ (১৯), মো আবছার (২০) ও মো. সাইদ উদ্দিন (১৮)। তাদের ঢাকার যাত্রাবাড়ী, চট্টগ্রাম কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই হিজরত কারিদের যিনি সমন্বয় করেছেন তার নাম মাওলানা আব্দুর রব। তিনি কোওমি মাদরাসায় পড়াশুনা করেছেন।২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি সৌদিআরব যায়। সেখানে গিয়ে সৌদিআরবের আবা শহরের একটি মসজিদের ইমাম পদে তিন চাকরি নেয়। সেখানে গিয়ে রেজিকালাইজড জাতীয় জঙ্গিবাদের কন্টেট দেখতে থাকে। সেটা দেখে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। একটা ভিডিও চিত্রে দেখে বিশ্বে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন। সেটা যাচাই না করেই তিনি উদ্বুদ্ধ হয়। ওই ভিডিওতে এক ব্যক্তির সন্ধান পায়। সেই ব্যাক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই এরকম জিহাদের আলোচনা করতে থাকে। যার সঙ্গে আলোচনা করতে থাকে তার নাম আবু সাঈদ। তিনি চট্টগ্রাম অধিবাসি। এই ব্যাক্তি বাদেও যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা এবং আরো অনেক ব্যাক্তির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন। সসস্ত্র প্রশিক্ষণ ও হামলার পরিকল্পনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় টেকনাফ অঞ্চলে হিজরত করে একটি পাহাড়কে বেছে নেয়া হবে। সেখানে তারা প্রশিক্ষণ নিবে। সংগঠিত হবে ও সসস্ত্র জিহাদ করবে।
তিনি বলেন, মাওলানা আব্দুর রব সবাইকে টেকনাফে পাঠিয়ে দেয়। প্রথমে তারা টেকনাফ অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসি আবছারের মাধ্যমে বাসা ভাড়া নেয়। নভেম্বরের ১৬ তারিখে দুই জন সেখানে যায়। সেখানে আবছারের ভাড়া করা বাসায় তার অবস্থান নেয়। পরিকল্পনা মোতাবেক ডিসেম্বরের ২২ তারিখ আব্দুর রব সৌদিআরব থেকে দেশে ফেরত আসে। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ না গিয়ে অন্যত্র ঢাকার একটি বাসায় উঠে। তারা সবাই পরবর্তিতে টেকনামে একত্রিত হয়। প্রশিক্ষণ ও রশদসহ কিভাবে কি করবে তা নিয়ে আলোচনা করে সবাই। আলোচনার এক পর্যায়ে শামীমকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তাকে সিটিটিসি গ্রেপ্তার করে। ঠিক এই সময় কক্সবাজারে আমাদের টিম ছিলো। ঐ দলটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে বাকিদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মূল টার্গেট ছিলো প্রশিক্ষিত হয়ে দেশে জিহদ করবে। তারা এই টার্গেটে কাজও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। সেই অংশ হিসেবে শামিম ঢাকায় আসে। এই দলটির আরো অনেক সদস্য আছে। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আমরা চিন্হিত করতে পেরেছি। আমাদের অভিযান চলমান আছে। তাদের কিছু বিষয় আমরা জানতে পেরেছি। বাকিটুকু জানতে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে আসামীদের। রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আলকায়দার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আলকায়দার আদর্শে তারা উদ্বুদ্ধ। তবে এখন পর্যন্ত হিজরত দেশে চলমান আছে। হিজরত বন্ধ করা যায়নি। তবে কমিয়ে আনা গেছে। হিজরতকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। তারপরো কিছু বিপদগামী তরুন সেলফ রেজিকালাইজড হয়ে পুনরায় আবার হিজরত করেছিলো। কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরত কমে আরো কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, সাংগঠনিক ভিত্তি এখনো তারা দার করাতে পারেনি। এটা তাদরে প্রথম প্রচেষ্টা। নিজেদের মধ্যে জিহাদের জন্য আলাপ আলোচনা করে তারা হিজরতের পরিকল্পনা করেছিলো। আগেও যারা হিজরত করেছে তাদের দেখে এই গ্রুপটি উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এভাবেই তাদের হিজরত কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথম দিকে তেমন সদস্য থাকে না। আস্তে আস্তে তারা গ্রুপের সদস্য বৃদ্ধি করে। তবে তাদের প্রথমেই ধরে ফেলার কারনে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারেনি। তারা টেকনাফে যে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো সেখানে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করছিলো। কিভাবে এবং কোথায় তারা এই কার্যক্রম শুরু করবে। কোন জায়গায় প্রশিক্ষণ নিবে, কিভাবে প্রশিক্ষণ নিবে, তাদের এই প্রশিক্ষনে কিভাবে ও কাদের কাছ থেকে সহায়তা নেয়া যায়, এই চিন্তা করে তারা অবস্থান করছিলো। তাদের লক্ষ ছিলো টেকনাফের একটি পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে প্রশিক্ষনে চিন্তা করছিলো।