স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে সঞ্চয়

- আপডেট সময় : ০২:৪৪:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে
দেশে শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে শুরু হওয়া ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রমে হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে সঞ্চয় বা আমানতের পরিমাণ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ- এই তিন মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আমানত কমেছে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। আর গত নয় মাসে এই কমার পরিমাণ ৩৩২ কোটি টাকা। অথচ এ সময়েই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে প্রায় ৬৮ হাজারটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য টাকা জমার সুযোগ আসে ২০১১ সালে। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক এই কার্যক্রমের জন্য পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করে। উদ্দেশ্য ছিল—ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের আর্থিকভাবে সচেতন করে তোলা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮২টি। এ সময় এসব অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ২ হাজার ৭৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তিন মাস আগেও (ডিসেম্বর শেষে) অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ২৮ হাজার ৪২৬টি এবং আমানত ছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ৫১ হাজার ৩৫৬টি, তবে আমানত কমেছে ৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। গত নয় মাসে হিসাব বেড়েছে ৬৭ হাজার ৮৬৬টি, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মোট আমানত কমেছে ৩৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। স্কুলের বেতন, খাতা-কলমসহ নানা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। পাশাপাশি, গত সরকারের সময় ব্যাংক খাতে যে অনিয়মের চিত্র সামনে এসেছে, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। এতে কয়েকটি ব্যাংকের প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়, যা স্কুল ব্যাংকিংয়েও প্রভাব ফেলেছে।
তবে ব্যাংকাররা বলছেন, বছরের শুরুতে বা শেষে অনেকে ছুটির কারণে পর্যটনে যান, বা স্কুলের বকেয়া ফি পরিশোধ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন। এগুলোকেও আমানত হ্রাসের স্বাভাবিক কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ি স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে সবচেয়ে সক্রিয় বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তারা এখন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ১১৪টি হিসাব খুলেছে, যেখানে জমা রয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো—যাদের হিসাব সংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৭টি এবং আমানত ৪২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো খুলেছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৪০৬টি হিসাব, যাতে জমা রয়েছে ৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো খুলেছে ২ হাজার ৭১৫টি হিসাব, যেখানে জমা রয়েছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্কুল ব্যাংকিংয়ে ছেলেরা অ্যাকাউন্ট খোলায় এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে মোট হিসাবের ৫১ শতাংশ ছেলেদের নামে, যা ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৮১টি। আমানতের পরিমাণেও ছেলেরা এগিয়ে— মোট সঞ্চয়ের ৪৯ শতাংশ তাদের নামে।
দেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টি ব্যাংক বর্তমানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রেখেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। মাত্র ১০০ টাকা জমা রেখেই এই হিসাব খোলা যায় এবং এতে ফি, চার্জ, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ইত্যাদিতে বিভিন্ন রকম ছাড় এবং সুবিধা দেওয়া হয়।