ঢাকা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলের পিকনিক নিয়ে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, সাত নির্দেশনা

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০২:৩৩:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০২৩ ১১৭ বার পড়া হয়েছে

বাধ্য হয়ে বনভোজন বা পিকনিক আয়োজনে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বার্ষিক বনভোজন বা পিকনিক করতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এসব আয়োজনের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নয়টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মানতে হবে সাতটি নির্দেশনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনভোজন বা পিকনিক করতে হলে প্রশাসনের এসব নির্দেশনা মানতেই হবে।

২০১১ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় ৪৫ শিক্ষার্থী। মিরসরাই উপজেলা সদর স্টেডিয়াম থেকে ফুটবল খেলা দেখে বিজয় উল্লাস করে বাড়ি ফেরার পথে চালকের অদক্ষতায় ট্রাক উল্টে সড়কের পাশের ডোবায় পড়ে যায়। ঘটে দেশের ইতিহাসের স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নিহতদের মধ্যে ৪২ জনই ছিল শিক্ষার্থী।

২০১৪ সালে সেন্টমার্টিনে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে গিয়ে আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সাগরে গোসল করতে নামেন। ছয়জন শিক্ষার্থী সে সময় ভেসে যান। পরে চারজনের মরদেহ উদ্ধার হয়। খোঁজ মেলেনি দুজনের।

ওই দুই ঘটনার পর সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০১৭ সালে উদ্‌যাপন বা পিকনিকে যাওয়ার আগে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী প্রশাসকের অনুমতি নেওয়াসহ সাত দফা শর্ত জুড়ে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত এসব শর্ত মানা হয়। কিন্তু করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর তা আর মানা হচ্ছিল না।

সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিকনিকের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে হতাহতের ঘটনা বেড়ে গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিকনিকের জন্য সাধারণত পাশের জেলা বা দূরের কোথাও যাওয়া হয়। বেশির ভাগ পিকনিকের গাড়ি স্থানীয়ভাবে ভাড়া নেওয়া হয়। চালকদের অন্য জেলার রাস্তা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা থাকে না। এছাড়া বাসের মধ্যে নাচ, গান, লাফালাফি করেন শিক্ষার্থীরা। এসব কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।

শিক্ষা সফরে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
জেলাপর্যায়ে শিক্ষাসফর হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলাপর্যায়ে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পূর্বানুমতি নিতে হবে। শিক্ষার্থী বহনকারী গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স, বিআরটিএ প্রত্যয়নের সত্যতা নিশ্চিত সাপেক্ষে অন্যান্য অনুমতি দেবে স্থানীয় প্রশাসন। পিকনিক বা শিক্ষাসফরে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই অভিভাবকদের কাছ থেকে সম্মতিপত্র নিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষাসফর বা পিকনিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আগেই ধারণা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিতে হবে। স্থানীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেসব বিধিবিধান আছে তা সবাইকে যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

সম্প্রতি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হন।

শিক্ষাসফরে যেতে পূর্বানুমতি এবং এ সংক্রান্ত বিধিবিধানের কারণে হয়রানি ও বিড়ম্বনায় পড়ার শঙ্কা করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তাদের শঙ্কা, নতুন নিয়মে শিক্ষাসফর বা পিকনিকে যেতে অনেকে উৎসাহ হারাবেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি পেতে ধরনা দেওয়া বা ঝামেলা মনে হওয়ায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাসফরে যাবে না কিংবা উদ্যোগ নেবে না।

ঢাকায় বনভোজন বাসের লাগবে পুলিশের অনুমতি
এখন থেকে রাজধানী ঢাকায় শিক্ষাসফর/বনভোজন বা সামাজিক ও ধর্মীয় যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য রিজার্ভ করা গাড়ির অস্থায়ী রুট পারমিট নিতে হবে। পারমিট না নিয়ে চলাচল করলে পুলিশ মামলা দেবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ জানায়, রুট পারমিট নেওয়ার শর্ত আগে থেকে ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি মানা হয় না। পারমিট ছাড়া বিভিন্ন রুটের যানবাহন রাজধানীতে ঢুকে পড়ায় যানজট সৃষ্টি হয়। এখন থেকে বনভোজনের তিন দিন আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নয় দফা নির্দেশনা দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সেখানে বলা হয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক সংস্থা ও বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাসফর, বনভোজন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা যেকোনো উৎসব অথবা এ জাতীয় অন্যান্য অনুষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অস্থায়ী রুট পারমিট বা ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগ অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আবেদনে যথাযথ মাধ্যমে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকে না। এজন্য যথাযথ সেবা ও অস্থায়ী রুট পারমিট প্রদান করা সম্ভব হয় না। তাই সবাইকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনের অনুরোধ জানানো হলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এম সামসুল হক বলেন, শিক্ষাসফর বা পিকনিকের নানা ধরনের ইতিবাচক দিক আছে। সেখানে নানা ধরনের শর্ত জুড়ে দিয়ে আনন্দযাত্রাটা বিঘ্ন করা ঠিক হবে না। শৃঙ্খলার জন্য শর্ত না দিয়ে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে। যেমন, সাগরে সাঁতার কাটতে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী যেন নিখোঁজ না হয় সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, আমাদের স্কুলে বিভাগভিত্তিক পিকনিক হয়। এতে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। এসব আয়োজনে অনুমতির প্রয়োজন হলে হয়রানি ও নানা জটিলতা বাড়বে। ইতিবাচক একটি কর্মসূচি কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে।

শিক্ষকরা বলছেন, পিকনিক করতে গিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমতি নিতে হলে বিড়ম্বনায় পড়বেন শিক্ষকরা। এতে সময় নষ্ট হবে। চাইলেও নির্দিষ্ট স্থানে পিকনিক করা যাবে না। ফলে আবহমানকাল ধরে চলে আসা শিক্ষা বা সংস্কৃতিমূলক সফরগুলো বাধার সম্মুখীন হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

স্কুলের পিকনিক নিয়ে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন, সাত নির্দেশনা

আপডেট সময় : ০২:৩৩:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০২৩

বাধ্য হয়ে বনভোজন বা পিকনিক আয়োজনে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বার্ষিক বনভোজন বা পিকনিক করতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এসব আয়োজনের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নয়টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মানতে হবে সাতটি নির্দেশনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনভোজন বা পিকনিক করতে হলে প্রশাসনের এসব নির্দেশনা মানতেই হবে।

২০১১ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় ৪৫ শিক্ষার্থী। মিরসরাই উপজেলা সদর স্টেডিয়াম থেকে ফুটবল খেলা দেখে বিজয় উল্লাস করে বাড়ি ফেরার পথে চালকের অদক্ষতায় ট্রাক উল্টে সড়কের পাশের ডোবায় পড়ে যায়। ঘটে দেশের ইতিহাসের স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নিহতদের মধ্যে ৪২ জনই ছিল শিক্ষার্থী।

২০১৪ সালে সেন্টমার্টিনে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে গিয়ে আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সাগরে গোসল করতে নামেন। ছয়জন শিক্ষার্থী সে সময় ভেসে যান। পরে চারজনের মরদেহ উদ্ধার হয়। খোঁজ মেলেনি দুজনের।

ওই দুই ঘটনার পর সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০১৭ সালে উদ্‌যাপন বা পিকনিকে যাওয়ার আগে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী প্রশাসকের অনুমতি নেওয়াসহ সাত দফা শর্ত জুড়ে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত এসব শর্ত মানা হয়। কিন্তু করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর তা আর মানা হচ্ছিল না।

সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিকনিকের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে হতাহতের ঘটনা বেড়ে গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিকনিকের জন্য সাধারণত পাশের জেলা বা দূরের কোথাও যাওয়া হয়। বেশির ভাগ পিকনিকের গাড়ি স্থানীয়ভাবে ভাড়া নেওয়া হয়। চালকদের অন্য জেলার রাস্তা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা থাকে না। এছাড়া বাসের মধ্যে নাচ, গান, লাফালাফি করেন শিক্ষার্থীরা। এসব কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।

শিক্ষা সফরে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
জেলাপর্যায়ে শিক্ষাসফর হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলাপর্যায়ে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পূর্বানুমতি নিতে হবে। শিক্ষার্থী বহনকারী গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স, বিআরটিএ প্রত্যয়নের সত্যতা নিশ্চিত সাপেক্ষে অন্যান্য অনুমতি দেবে স্থানীয় প্রশাসন। পিকনিক বা শিক্ষাসফরে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই অভিভাবকদের কাছ থেকে সম্মতিপত্র নিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষাসফর বা পিকনিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আগেই ধারণা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিতে হবে। স্থানীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেসব বিধিবিধান আছে তা সবাইকে যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

সম্প্রতি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হন।

শিক্ষাসফরে যেতে পূর্বানুমতি এবং এ সংক্রান্ত বিধিবিধানের কারণে হয়রানি ও বিড়ম্বনায় পড়ার শঙ্কা করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তাদের শঙ্কা, নতুন নিয়মে শিক্ষাসফর বা পিকনিকে যেতে অনেকে উৎসাহ হারাবেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি পেতে ধরনা দেওয়া বা ঝামেলা মনে হওয়ায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাসফরে যাবে না কিংবা উদ্যোগ নেবে না।

ঢাকায় বনভোজন বাসের লাগবে পুলিশের অনুমতি
এখন থেকে রাজধানী ঢাকায় শিক্ষাসফর/বনভোজন বা সামাজিক ও ধর্মীয় যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য রিজার্ভ করা গাড়ির অস্থায়ী রুট পারমিট নিতে হবে। পারমিট না নিয়ে চলাচল করলে পুলিশ মামলা দেবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ জানায়, রুট পারমিট নেওয়ার শর্ত আগে থেকে ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি মানা হয় না। পারমিট ছাড়া বিভিন্ন রুটের যানবাহন রাজধানীতে ঢুকে পড়ায় যানজট সৃষ্টি হয়। এখন থেকে বনভোজনের তিন দিন আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নয় দফা নির্দেশনা দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সেখানে বলা হয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক সংস্থা ও বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাসফর, বনভোজন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা যেকোনো উৎসব অথবা এ জাতীয় অন্যান্য অনুষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অস্থায়ী রুট পারমিট বা ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগ অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আবেদনে যথাযথ মাধ্যমে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকে না। এজন্য যথাযথ সেবা ও অস্থায়ী রুট পারমিট প্রদান করা সম্ভব হয় না। তাই সবাইকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনের অনুরোধ জানানো হলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এম সামসুল হক বলেন, শিক্ষাসফর বা পিকনিকের নানা ধরনের ইতিবাচক দিক আছে। সেখানে নানা ধরনের শর্ত জুড়ে দিয়ে আনন্দযাত্রাটা বিঘ্ন করা ঠিক হবে না। শৃঙ্খলার জন্য শর্ত না দিয়ে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে। যেমন, সাগরে সাঁতার কাটতে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী যেন নিখোঁজ না হয় সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, আমাদের স্কুলে বিভাগভিত্তিক পিকনিক হয়। এতে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। এসব আয়োজনে অনুমতির প্রয়োজন হলে হয়রানি ও নানা জটিলতা বাড়বে। ইতিবাচক একটি কর্মসূচি কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে।

শিক্ষকরা বলছেন, পিকনিক করতে গিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমতি নিতে হলে বিড়ম্বনায় পড়বেন শিক্ষকরা। এতে সময় নষ্ট হবে। চাইলেও নির্দিষ্ট স্থানে পিকনিক করা যাবে না। ফলে আবহমানকাল ধরে চলে আসা শিক্ষা বা সংস্কৃতিমূলক সফরগুলো বাধার সম্মুখীন হবে।