ঢাকা ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সুন্দরবনে তিন সপ্তাহেই ২৬০০ ফাঁদ উদ্ধার

দেশের আওয়াজ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১১:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে

১ জুন থেকে শুরু হওয়া সুন্দরবনের তিন মাসব্যাপী নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ সময় বনজীবী ও পর্যটকদের বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও নিয়মিত অভিযানে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে হরিণ শিকারের ফাঁদ। শুধু জুন মাসেই পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ২৬০০-র বেশি ফাঁদ উদ্ধার করেছে।

এই ফাঁদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ‘মালা ফাঁদ’, যা চিকন রশি বা জিআই তার দিয়ে তৈরি করে গাছের গোড়ায় বৃত্ত আকারে পাতা হয়। হরিণ দৌড়াতে গিয়ে এতে আটকে পড়ে। এরপর ‘ছিটকা ফাঁদ’ ও ‘হাঁটা ফাঁদ’ও বেশ দেখা যায়, যাতে হরিণ ফাঁদে পা ফেললেই গাছের ডালসহ উঠে ঝুলে যায়।

১৬ জুন শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমণি টহল ফাঁড়ির বনকর্মীরা গহিন বনের টিয়ারচর এলাকায় এক অভিযানে একাই উদ্ধার করে ৬০০টি মালা ফাঁদ। একইসাথে উদ্ধার হয় কাঁকড়া ধরার ১৬টি নিষিদ্ধ চারু। ১৯ জুন চান্দেশ্বর ক্যাম্প এলাকায় আরও ৩৬০টি ফাঁদ জব্দ হয়।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, ২০ জুন পর্যন্ত ২৬টি অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ২৬১৫টি হরিণ শিকারের ফাঁদ, ১৬টি নৌকা ও ট্রলার, বিষ দিয়ে শিকার করা ১৩০ কেজি মাছ, ৬ বোতল বিষ, ১১০টি কাঁকড়া ধরার ফাঁদ, ২ বান্ডিল দড়ি। আটক করা হয়েছে ১২ জন, করা হয়েছে ১২টি মামলা।

পূর্বে মে মাসে ৩৭টি অভিযানে উদ্ধার হয়েছিল ১২৫টি মালা ফাঁদ, ৭৮টি ছিটকা ফাঁদ, ৪টি নৌকা, ৩টি হরিণের মাথা, ৪২ কেজি মাংস। এ সময় ১৫টি মামলা হয়েছিল।

বনকর্মীরা এখন ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’ নামে হেঁটে টহল দিচ্ছেন, যাতে বনের ভেতরে পাতা ফাঁদ দ্রুত শনাক্ত হচ্ছে। এভাবে বহু হরিণের জীবন রক্ষা পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘হেঁটে এই টহল বেশ কার্যকর হচ্ছে। এর মাধ্যমে বনে পেতে রাখা হরিণ শিকারের ফাঁদগুলো দ্রুত শনাক্ত করা যাচ্ছে এবং বহু হরিণ বেঁচে যাচ্ছে।’

চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ দ্বীপন চন্দ্র দাস জানান, শিকারিদের তালিকা তৈরি করে স্মার্ট প্যাট্রলিং ও ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি চলছে। ড্রোনে ধরা পড়ে সম্প্রতি একটি অবৈধ নৌকা জব্দ করা হয়েছে।

তবে বড় সমস্যা ‘সামাজিক চাহিদা’। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অতিথি আপ্যায়নে এখনো হরিণের মাংস রান্নার প্রচলন আছে। কেউ কেউ বলেন, পুলিশ-প্রশাসনের লোকদের জন্যও হরিণের মাংস রান্না করা হয়। এটি অনেক সময় ‘ঘুষ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

সুজন বাগেরহাটের সম্পাদক এস কে হাসিব বলেন, ‘হরিণ শুধু সুন্দরবনের শোভা নয়—বাঘের খাদ্য, বনজ জীববৈচিত্র্যের অংশ। শিকার বন্ধ না হলে বাঘও তার খাবার হারাবে।’

ডিএফও রেজাউল করিম বলেন, ‘শিকারির সঙ্গে সঙ্গে যারা হরিণের মাংস খায়, তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এদের সামাজিকভাবে বর্জন করা দরকার। ভোক্তা আছে বলেই শিকারিরা চুরি করে সুন্দরবনে ঢোকে।’

সূত্র: প্রথম আলো

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সুন্দরবনে তিন সপ্তাহেই ২৬০০ ফাঁদ উদ্ধার

আপডেট সময় : ১১:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

১ জুন থেকে শুরু হওয়া সুন্দরবনের তিন মাসব্যাপী নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ সময় বনজীবী ও পর্যটকদের বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও নিয়মিত অভিযানে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে হরিণ শিকারের ফাঁদ। শুধু জুন মাসেই পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ২৬০০-র বেশি ফাঁদ উদ্ধার করেছে।

এই ফাঁদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ‘মালা ফাঁদ’, যা চিকন রশি বা জিআই তার দিয়ে তৈরি করে গাছের গোড়ায় বৃত্ত আকারে পাতা হয়। হরিণ দৌড়াতে গিয়ে এতে আটকে পড়ে। এরপর ‘ছিটকা ফাঁদ’ ও ‘হাঁটা ফাঁদ’ও বেশ দেখা যায়, যাতে হরিণ ফাঁদে পা ফেললেই গাছের ডালসহ উঠে ঝুলে যায়।

১৬ জুন শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমণি টহল ফাঁড়ির বনকর্মীরা গহিন বনের টিয়ারচর এলাকায় এক অভিযানে একাই উদ্ধার করে ৬০০টি মালা ফাঁদ। একইসাথে উদ্ধার হয় কাঁকড়া ধরার ১৬টি নিষিদ্ধ চারু। ১৯ জুন চান্দেশ্বর ক্যাম্প এলাকায় আরও ৩৬০টি ফাঁদ জব্দ হয়।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, ২০ জুন পর্যন্ত ২৬টি অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ২৬১৫টি হরিণ শিকারের ফাঁদ, ১৬টি নৌকা ও ট্রলার, বিষ দিয়ে শিকার করা ১৩০ কেজি মাছ, ৬ বোতল বিষ, ১১০টি কাঁকড়া ধরার ফাঁদ, ২ বান্ডিল দড়ি। আটক করা হয়েছে ১২ জন, করা হয়েছে ১২টি মামলা।

পূর্বে মে মাসে ৩৭টি অভিযানে উদ্ধার হয়েছিল ১২৫টি মালা ফাঁদ, ৭৮টি ছিটকা ফাঁদ, ৪টি নৌকা, ৩টি হরিণের মাথা, ৪২ কেজি মাংস। এ সময় ১৫টি মামলা হয়েছিল।

বনকর্মীরা এখন ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’ নামে হেঁটে টহল দিচ্ছেন, যাতে বনের ভেতরে পাতা ফাঁদ দ্রুত শনাক্ত হচ্ছে। এভাবে বহু হরিণের জীবন রক্ষা পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘হেঁটে এই টহল বেশ কার্যকর হচ্ছে। এর মাধ্যমে বনে পেতে রাখা হরিণ শিকারের ফাঁদগুলো দ্রুত শনাক্ত করা যাচ্ছে এবং বহু হরিণ বেঁচে যাচ্ছে।’

চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ দ্বীপন চন্দ্র দাস জানান, শিকারিদের তালিকা তৈরি করে স্মার্ট প্যাট্রলিং ও ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি চলছে। ড্রোনে ধরা পড়ে সম্প্রতি একটি অবৈধ নৌকা জব্দ করা হয়েছে।

তবে বড় সমস্যা ‘সামাজিক চাহিদা’। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অতিথি আপ্যায়নে এখনো হরিণের মাংস রান্নার প্রচলন আছে। কেউ কেউ বলেন, পুলিশ-প্রশাসনের লোকদের জন্যও হরিণের মাংস রান্না করা হয়। এটি অনেক সময় ‘ঘুষ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

সুজন বাগেরহাটের সম্পাদক এস কে হাসিব বলেন, ‘হরিণ শুধু সুন্দরবনের শোভা নয়—বাঘের খাদ্য, বনজ জীববৈচিত্র্যের অংশ। শিকার বন্ধ না হলে বাঘও তার খাবার হারাবে।’

ডিএফও রেজাউল করিম বলেন, ‘শিকারির সঙ্গে সঙ্গে যারা হরিণের মাংস খায়, তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এদের সামাজিকভাবে বর্জন করা দরকার। ভোক্তা আছে বলেই শিকারিরা চুরি করে সুন্দরবনে ঢোকে।’

সূত্র: প্রথম আলো