শ্রদ্ধা জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত স্মৃতিসৌধ

- আপডেট সময় : ০৯:১৭:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০১ বার পড়া হয়েছে
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে এবং নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
আগামীকাল ৫২তম বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপ্রতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশ বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ পুরো জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
আর এ লক্ষে প্রস্তত করা হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধ চত্বরে শেষ হয়েছে ধোয়া-মোছার কাজ, সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষে বাহারি রংয়ের ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। পুরনো ফুলগাছগুলোর ডালপালা ছাঁটাই করা হয়েছে। সৌধের সিঁড়ি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পড়ছে রং তুলির আঁচড়।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে বড় আকারে বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বসানো হয়েছে। সৌধ চত্বরের চারপাশে কয়েক’শ টবে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের ফুল আর পাতা বাহার গাছ। নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার, উচ্চ মাত্রার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডগ স্কোয়াড দিয়ে প্রতিটি স্থান তল্লাশি করছে।
আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর। ৫১তম মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এর পরেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে লাখো মানুষের ঢল নামবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে ১০৮ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা রং-তুলির আঁচড়ে সেজেছে ভিন্ন সাজে। নানা রঙের বাহারি ফুলের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। চত্বরের সিঁড়িসহ নানা স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আঁচড়। ধুয়ে মুছে চকচকে করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ চত্বরের প্রতিটি স্থাপনা। গত দেড়মাস ধরে এই প্রস্তুতি উপলক্ষে নিরলসভাবে কাজ করেছেন গণপূর্তের প্রায় দেড়শতাধিক কর্মী বাহিনী। তাদের নিরলস পরিশ্রমে নতুনরূপ পেয়েছে সৌধ এলাকাটি।
এদিকে বিজয় দিবসের একদিন আগেই জাতীয় স্মৃতিসৌধের সব ধরনের কাজ শেষ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। স্মৃতিসৌধের ফটক থেকে মিনার পর্যন্ত পুরো এলাকা ধুয়ে মুছে চকচকে করা হয়েছে। সৌধ চূড়া পরিষ্কার করার কাজ শেষ। লেকও পরিষ্কার করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে লাল-সবুজ আলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। এখন চলছে নবম পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্বে তিন বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এ ব্যাপারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, মহান বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরাসহ লাখো মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এজন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধকে দেড়মাস ধরে আমাদের প্রায় দেড়শ কর্মী ও দুটো প্রেশার মেশিন দিয়ে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেছে। রং-তুলির আঁচড় এবং নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি আগামীকাল স্মৃতিসৌধে আগত সকল দর্শনার্থীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসহ ও যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখানকার পুলিশ ও আনসার ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থানে রাখা হয়েছে। আমাদের আশা আগামীকাল সকলেই একটি সুন্দর এবং উপভোগ্য বিজয় দিবস উদযাপন করতে পারবেন।
নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মহান বিজয় দিবসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা, বিভিন্ন কুটনৈতিক মিশনের প্রধানসহ সকলে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধ আত্মোৎসর্গকারী শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকলের নিরাপত্তার লক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বহিরাগত কেউ আশপাশের এলাকায় অবস্থান করলে সে বিষয়ে পুলিশকে জানানোর জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ করা হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান এসপি।
তিনি বলেন, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মহান বিজয় দিবসে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওইদিন সকালে স্মৃতিসৌধে আসবেন এবং অধিক লোকের জমায়েত হবে এ বিষয়টির দিকে লক্ষ রেখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কিছু নির্দেশনা রয়েছে। যেসকল গাড়ি উত্তরবঙ্গের দিক থেকে ঢাকায় আসবে সেগুলো ওইদিন চন্দ্রা ও গাজীপুর হয়ে এবং মানিকগঞ্জের দিক থেকে আসা গাড়ি নবীনগরমোড় হয়ে আশুলিয়া দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো গাবতলী থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে আশুলিয়া বা উত্তরা দিয়ে গাজিপুর হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে যাবে এবং মানিকগঞ্জের দিকের গাড়িগুলো বেড়িবাঁধ দিয়ে আশুলিয়া এবং নবীনগর মোড়ের এই সড়কটি ব্যবহার করবে।
এর আগে স্মৃতিসৌধের প্রস্ততি দেখতে এসে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছিলেন, ফুলে ও সতেজ পাতায় ভরে উঠেছে স্মৃতিসৌধ চত্বর। সরকার নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে। সরকারের এ পদক্ষেপে কোনো ধরণের নাশকতার আশঙ্কা দেখছি না। কারও পক্ষে এটি সম্ভবও হবে না। প্রতি বছরের মতো এবারও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে স্মৃতিসৌধের যে আনুষ্ঠানিকতা সেটি সম্পন্ন হবে।
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১০৮ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই স্মৃতিসৌধে প্রতি বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।