রাজশাহীতে গোলাগুলির, সাংবাদিক জুলুসহ গ্রেপ্তার ৩

- আপডেট সময় : ১১:২৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী মহানগরীর খুলিপাড়া এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জুলু, তার ছেলে জিম ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অপরজন হলন, মো: মুন্না । সে জিমের সহযোগী। বুধবার (২ জুলাই) দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা এই অভিযান চলে। এসময় অস্ত্রের খোঁজে জুলুর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। গ্রেপ্তার মুন্না সম্পর্কে নজরুল ইসলাম জুলুর ভাতিজা। জরুল ইসলাম জুলু রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ও খবর ২৪ ঘণ্টা নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের উপদেষ্টা সম্পাদক। ৫ আগস্টের পরে জুলু স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির এক নেতার ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন। রাজশাহীতে হওয়া ৫ আগস্টের বিভিন্ন মামলার আসামিদের কাছ থেকেও বাণিজ্য শুরু করেন এই জুলু বাহিনী। গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) দিবাগত রাতে সিয়াম ইসলাম রাজ (২০) নামের এক তরুণের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্ব বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য তিনি বিকেলে বাসার রোড মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানে নাদিম (২৯) নামের এক যুবক তাকে কিলঘুষি মারেন। এছাড়া মো. সাকিব (২৪) নামের আরেক যুবক পিস্তল বের করে দুই রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করেন। পরে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। গুলি ছোঁড়ার ওই ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার জুলুর বিরুদ্ধে ঢাকায় ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলাসহ মোট ২২টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে শেখ হাসিনার নামও ওই মামলার আসামি তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এবষিয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন,এই মামলা হওয়ার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা খুলিপাড়া মহল্লায় নজরুল ইসলাম জুলুর বাড়িতে অভিযান চালায়। বাড়ি থেকে নজরুল ও তার ছেলে জিম এবং একই এলাকা থেকে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজের করা মামলায় তদন্তে প্রাপ্ত আসামি হিসেবে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি সুত্র জানায়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত আগস্টে জুলুসহ কিছু সাংবাদিক রাজশাহী প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নেন। আগের সভাপতি সাইদুর রহমানকে প্রেসক্লাব থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নজরুল ইসলাম জুলু প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে অক্টোবরে তিন বছরের জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হলে তিনি সিনিয়র সহসভাপতি হন। এরপর ডিসেম্বরেই ওই কমিটি পূণর্গঠন করে আগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন কমিটিতে নজরুল ইসলাম জুলু সভাপতি হন। আর সাধারণ সম্পাদক হন শাহ সুফী মুহিব্বুল আরেফিন। রাজশাহী প্রেসক্লাবের এই কমিটিতে নজরুল ইসলামের ছেলে জিমকেও সদস্য করা হয়। সেই থেকে নজরুল ইসলাম রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিচ্ছিলেন। তবে প্রেসক্লাব দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন সাইদুর রহমান। তিনি নগরের জিরোপয়েন্টে পুরনো প্রেসক্লাবে যেতে না পারলেও গত ২৩ জুন শিরোইল পূর্বালী মার্কেটে রাজশাহী প্রেসক্লাব নামে কার্যক্রম শুরু করেন। সেখানেও টাঙানো হয় রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাইনবোর্ড। এরপর গত ৩০ জুন সেখান থেকেই জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক বার্তা পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুনকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে সাইদুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা মামুনকে নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট করে আসছিলেন নজরুল ইসলাম জুলু। এরমধ্যেই তিনি যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হলেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছু ক্ষুব্ধ লোকজন জিরোপয়েন্টে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন, এই প্রেসক্লাবই ছিল সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জুলুর নিয়ন্ত্রণে। প্রেসক্লাব নিয়ন্ত্রণের পর থেকে তিনি স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধেও ফেসবুকে সোচ্চার ছিলেন।