ঢাকা ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভালো নেই সুন্দরবনের ২ লক্ষাধিক জেলে-মৌয়াল-বাওয়ালি

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৫:০৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে

জীবিকার তাগিদে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে কাজ করলেও নানা সমস্যায় ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বনজীবী, জেলে, মৌয়াল বাওয়ালিরা। অনেক সময় তাদের পাস-পারমিটের রাজস্বের টাকাও ওঠে না। সুন্দরবন সংলগ্ন পাঁচ জেলার ২ লক্ষাধিক দরিদ্র জেলে মৌয়াল বাওয়ালি ১২ হাজার নিবন্ধিত নৌকা-ট্রলার নিয়ে মাছ, কাঁকড়া, মধু, মোম, গোলপাতা ও মালিয়া ছন আহরণ করে, জানায় বন বিভাগ। রাজস্ব পরিশোধের বিনিময়ে পাস-পারমিট নিয়ে মাছ, কাঁকড়া, মধু, মোম, গোলপাতা ও মালিয়া ছন আহরণ করা হয়ে থাকে।

বাগেরহাটের পূর্ব সন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলাসহ আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালারা চরে অস্থায়ী শুঁটকি জেলেপল্লীতে প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলে সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে শুঁটকি উৎপাদন।

জেলে মো. জাহিদ বহাদ্দার ও ফরিদ আহমেদ জানান, চরগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। হাজার হাজার জেলের জন্য নিরাপদ খাবার পানি সংকট ও সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নেই। পানিবাহিত নানা রোগ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর বহু জেলের মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া সাগরতীরের এ চরগুলোতে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেও অনেকের মৃত্যু হয়। শরণখোলার ইসমাইল মহানাজ ও মোংলার অভিজিৎ সরকার বলেন, সুন্দরবনের জলভাগে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। এক শ্রেণির জেলে নামধারী দুর্বৃত্ত অধিক মুনাফার লোভে ভাটার সময় জাল পেতে নদীখালে বিষ দেয়। এ কারণে মাছ মরে যায়।

এতে সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার বিনাশ হচ্ছে। এখন আর আগের মতো মাছ ও কাঁকড়া পাই না। কখনো কখনো আমাদের পাস-পারমিটের রাজস্বের টাকাও ওঠে না। গত মৌসুমে ৭৫ হাজার ৪৪২ কুইন্টাল শুঁটকি আহরণ করা হয়। একই সময়ে সুন্দরবনের ৪৫০টি নদী খাল থেকে জেলেরা নিবন্ধিত নৌকা-ট্রলার দিয়ে ৭৫০ টন ইলিশ ও ১৭ হাজার ১৫১ কুইন্টার অন্য মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করে।

সুন্দরবনে মার্চ থেকে শুরু হয় তিন মাসব্যাপী মধু আহরণ মৌসুম। গত মৌসুম শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে ৩৬৫টি পাস-পারমিট নিয়ে ২ হাজার ৪৫০ মৌয়াল ৯৫৩ দশমিক ৫০ কুইন্টাল মধু ও ২৮৬ দশমিক ১০ কুইন্টাল মোম আহরণ করেছিল।

শরণখোলার মৌয়াল নুরুল ইসলাম ও আউয়াল খান জানান, মধু আহরণ নৌকা মেরামত, ১৪ দিনের খাবার ও মহাজনের কাছ থেকে দাদনে টাকা পরিশোধ করে মৌয়ালদের কিছুই থাকছে না। গত মৌসুমে সুন্দরবনের চারটি গোলপাতা কুপ থেকে ২ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা ও ৫৫০ কুইন্টাল মালিয়া ছন আহরিত হয়।

বাওয়ালি এনাম হোসেন জানান, মালিয়া ছন ও গোলপাতায় ভালো ব্যবসা নেই। ডিএফও মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হলেও নানা সংকটে বাওয়ালি ও মৌয়ালদের মধ্যে আগ্রহ একটু কম থাকায় চলতি মৌসুমে মালিয়া ছন, গোলপাতা ও মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ভালো নেই সুন্দরবনের ২ লক্ষাধিক জেলে-মৌয়াল-বাওয়ালি

আপডেট সময় : ০৫:০৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

জীবিকার তাগিদে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে কাজ করলেও নানা সমস্যায় ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বনজীবী, জেলে, মৌয়াল বাওয়ালিরা। অনেক সময় তাদের পাস-পারমিটের রাজস্বের টাকাও ওঠে না। সুন্দরবন সংলগ্ন পাঁচ জেলার ২ লক্ষাধিক দরিদ্র জেলে মৌয়াল বাওয়ালি ১২ হাজার নিবন্ধিত নৌকা-ট্রলার নিয়ে মাছ, কাঁকড়া, মধু, মোম, গোলপাতা ও মালিয়া ছন আহরণ করে, জানায় বন বিভাগ। রাজস্ব পরিশোধের বিনিময়ে পাস-পারমিট নিয়ে মাছ, কাঁকড়া, মধু, মোম, গোলপাতা ও মালিয়া ছন আহরণ করা হয়ে থাকে।

বাগেরহাটের পূর্ব সন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলাসহ আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালারা চরে অস্থায়ী শুঁটকি জেলেপল্লীতে প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলে সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে শুঁটকি উৎপাদন।

জেলে মো. জাহিদ বহাদ্দার ও ফরিদ আহমেদ জানান, চরগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। হাজার হাজার জেলের জন্য নিরাপদ খাবার পানি সংকট ও সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নেই। পানিবাহিত নানা রোগ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর বহু জেলের মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া সাগরতীরের এ চরগুলোতে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেও অনেকের মৃত্যু হয়। শরণখোলার ইসমাইল মহানাজ ও মোংলার অভিজিৎ সরকার বলেন, সুন্দরবনের জলভাগে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। এক শ্রেণির জেলে নামধারী দুর্বৃত্ত অধিক মুনাফার লোভে ভাটার সময় জাল পেতে নদীখালে বিষ দেয়। এ কারণে মাছ মরে যায়।

এতে সুন্দরবনের মৎস্য ভান্ডার বিনাশ হচ্ছে। এখন আর আগের মতো মাছ ও কাঁকড়া পাই না। কখনো কখনো আমাদের পাস-পারমিটের রাজস্বের টাকাও ওঠে না। গত মৌসুমে ৭৫ হাজার ৪৪২ কুইন্টাল শুঁটকি আহরণ করা হয়। একই সময়ে সুন্দরবনের ৪৫০টি নদী খাল থেকে জেলেরা নিবন্ধিত নৌকা-ট্রলার দিয়ে ৭৫০ টন ইলিশ ও ১৭ হাজার ১৫১ কুইন্টার অন্য মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করে।

সুন্দরবনে মার্চ থেকে শুরু হয় তিন মাসব্যাপী মধু আহরণ মৌসুম। গত মৌসুম শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে ৩৬৫টি পাস-পারমিট নিয়ে ২ হাজার ৪৫০ মৌয়াল ৯৫৩ দশমিক ৫০ কুইন্টাল মধু ও ২৮৬ দশমিক ১০ কুইন্টাল মোম আহরণ করেছিল।

শরণখোলার মৌয়াল নুরুল ইসলাম ও আউয়াল খান জানান, মধু আহরণ নৌকা মেরামত, ১৪ দিনের খাবার ও মহাজনের কাছ থেকে দাদনে টাকা পরিশোধ করে মৌয়ালদের কিছুই থাকছে না। গত মৌসুমে সুন্দরবনের চারটি গোলপাতা কুপ থেকে ২ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা ও ৫৫০ কুইন্টাল মালিয়া ছন আহরিত হয়।

বাওয়ালি এনাম হোসেন জানান, মালিয়া ছন ও গোলপাতায় ভালো ব্যবসা নেই। ডিএফও মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হলেও নানা সংকটে বাওয়ালি ও মৌয়ালদের মধ্যে আগ্রহ একটু কম থাকায় চলতি মৌসুমে মালিয়া ছন, গোলপাতা ও মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে।