ঢাকা ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভুয়া ভিডিওতে সয়লাব সামাজিক মাধ্যম

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৪:০৩:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪ ১৮ বার পড়া হয়েছে

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশে সংঘ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে ঘুরে বেড়ানো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেশিরভাগ ভিডিও ভুয়া ও গুজব বলে জানিয়েছেন ফ্যাক্ট চেকাররা।

বিবিসির ফ্যাক্ট চেকাররা জানান, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার হচ্ছে বলে যে সব ভুয়া পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বেশিরভাগই ভারতীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ড থেকে পোস্ট করা হয়েছে। কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে বাংলাদেশের ভেতর থেকেও।

তথ্য যাচাই করতে গিয়ে বিবিসি দেখেছে, শুধু হিন্দু নয়, ভাঙচুর আর জালাও পোড়াও হয়েছে মুসলমানদের ঘরবাড়িতেও। এসব ঘটনা ধর্ম নয়, বরং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে। যাকে ভারত থেকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের সহিংসতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া বেশকিছু ভিডিও ও ছবি যাচাই করেছেন এএফপি’র ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির। তিনি অন্তত ২০টি ভুয়া তথ্য খুঁজে পেয়েছেন।
রোববার (১১ আগস্ট) ফেসবুকে এসব তথ্যের আসল ঘটনা উম্মোচন করে কদরুদ্দিন শিশির লিখেছেন, প্রকৃত ঘটনার পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক ভুয়া খবর, ছবি, ভিডিও ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব ও টিকটকে ছড়িয়েছে। এ সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি দাবিতে ছড়ানো ভুয়া কন্টেন্টের একটা তালিকা পোস্ট করেছেন তিনি। পরবর্তীতে এগুলো আপডেট হতে থাকবেও জানিয়েছেন তিনি।

যেসব ক্যাপশনের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা তুলে ধরা হলো-

১. বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা হিন্দু ব্যক্তিকে ধরে গুলি করছে বলে একটি দাবি করা হয়েছে।

২. হিন্দু পরিবারের শিশুসহ হত্যা করা হয়েছে।

৩. হিন্দু মেয়েকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা ধর্ষণ করেছেন বলে একটি তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

৪. হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণের পর অন্তর্বাস নিয়ে উল্লাসের দাবি করা হয়েছে।

৫. নোয়াখালীর সেনবাগে হিন্দু মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও তিনটি দাবি করা হয় ফেসবুক ও এক্সে।

৬. হিন্দু ব্যক্তিকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার দাবি করেছেন একজন এক্স ব্যবহারকারী।

৭. বাংলাদেশি হিন্দু নারীর হাতুড়ি হাতে প্রতিরোধের একটি ভুয়া দাবি করা হয়েছে।

৮. ইনানী সমুদ্র সৈকতে হিন্দুদের লাশ বলেও একটি ভুয়া দাবি করা হয়েছে।

৯. হিন্দু নারীকে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে এক্সে পোস্ট করে। তবে দাবিটি ভুয়া।

১০. হিন্দু দোকানে আগুনের একটি ভুয়া ভিডিও ফ্যাক্ট চেকে ধরা পড়েছে।

১১. ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি হিন্দুরা জড়ো হয়েছে বলে দাবি করা হয়, তবে এই দাবিও ভুয়া।

১২. বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েকে পিলারে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা বলে এক্সে দাবি করা হয়। তবে এটিও ভুয়া দাবি।

১৩. হিন্দু মেয়েকে পুকুরে ফেলা দেওয়ার দাবি করে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। তবে এই দাবিও ভুয়া।

১৪. জ্বলন্ত মন্দিরের ছবি প্রচার করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়। তবে এই দাবিটি ভুয়া। তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে নির্মিত ছবি।

১৫. হিন্দু মেয়েকে বেঁধে রাখার দৃশ্যকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এই দাবিটিও ভুয়া।

১৬. ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে আসল ঘটনা ভিন্ন।

১৭. হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার দাবি করা হলেও তা ভুয়া।

১৮. বাংলাদেশে মন্দিরে আগুনের ভিডিও দাবিতে ছড়ানো ঘটনাটিও ভুয়া বলে দেখে গেছে।

১৯. ৫০০ হিন্দু হত্যা, শত শত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এমন কোনো তথ্য মূলধারার মিডিয়া বা হিন্দু অধিকার সংগঠনগুলোও দাবি করেনি।

২০. বাংলাদেশে হাসিনার পলায়ন পরবর্তী ঘটনায় মন্দির ভাঙচুরের ছবি বলে দাবি করা হলেও এটি ভুয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভুয়া ভিডিওতে সয়লাব সামাজিক মাধ্যম

আপডেট সময় : ০৪:০৩:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশে সংঘ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে ঘুরে বেড়ানো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেশিরভাগ ভিডিও ভুয়া ও গুজব বলে জানিয়েছেন ফ্যাক্ট চেকাররা।

বিবিসির ফ্যাক্ট চেকাররা জানান, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার হচ্ছে বলে যে সব ভুয়া পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বেশিরভাগই ভারতীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ড থেকে পোস্ট করা হয়েছে। কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে বাংলাদেশের ভেতর থেকেও।

তথ্য যাচাই করতে গিয়ে বিবিসি দেখেছে, শুধু হিন্দু নয়, ভাঙচুর আর জালাও পোড়াও হয়েছে মুসলমানদের ঘরবাড়িতেও। এসব ঘটনা ধর্ম নয়, বরং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে। যাকে ভারত থেকে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের সহিংসতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া বেশকিছু ভিডিও ও ছবি যাচাই করেছেন এএফপি’র ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির। তিনি অন্তত ২০টি ভুয়া তথ্য খুঁজে পেয়েছেন।
রোববার (১১ আগস্ট) ফেসবুকে এসব তথ্যের আসল ঘটনা উম্মোচন করে কদরুদ্দিন শিশির লিখেছেন, প্রকৃত ঘটনার পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক ভুয়া খবর, ছবি, ভিডিও ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব ও টিকটকে ছড়িয়েছে। এ সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি দাবিতে ছড়ানো ভুয়া কন্টেন্টের একটা তালিকা পোস্ট করেছেন তিনি। পরবর্তীতে এগুলো আপডেট হতে থাকবেও জানিয়েছেন তিনি।

যেসব ক্যাপশনের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা তুলে ধরা হলো-

১. বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা হিন্দু ব্যক্তিকে ধরে গুলি করছে বলে একটি দাবি করা হয়েছে।

২. হিন্দু পরিবারের শিশুসহ হত্যা করা হয়েছে।

৩. হিন্দু মেয়েকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা ধর্ষণ করেছেন বলে একটি তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

৪. হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণের পর অন্তর্বাস নিয়ে উল্লাসের দাবি করা হয়েছে।

৫. নোয়াখালীর সেনবাগে হিন্দু মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও তিনটি দাবি করা হয় ফেসবুক ও এক্সে।

৬. হিন্দু ব্যক্তিকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার দাবি করেছেন একজন এক্স ব্যবহারকারী।

৭. বাংলাদেশি হিন্দু নারীর হাতুড়ি হাতে প্রতিরোধের একটি ভুয়া দাবি করা হয়েছে।

৮. ইনানী সমুদ্র সৈকতে হিন্দুদের লাশ বলেও একটি ভুয়া দাবি করা হয়েছে।

৯. হিন্দু নারীকে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে এক্সে পোস্ট করে। তবে দাবিটি ভুয়া।

১০. হিন্দু দোকানে আগুনের একটি ভুয়া ভিডিও ফ্যাক্ট চেকে ধরা পড়েছে।

১১. ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি হিন্দুরা জড়ো হয়েছে বলে দাবি করা হয়, তবে এই দাবিও ভুয়া।

১২. বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েকে পিলারে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা বলে এক্সে দাবি করা হয়। তবে এটিও ভুয়া দাবি।

১৩. হিন্দু মেয়েকে পুকুরে ফেলা দেওয়ার দাবি করে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। তবে এই দাবিও ভুয়া।

১৪. জ্বলন্ত মন্দিরের ছবি প্রচার করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়। তবে এই দাবিটি ভুয়া। তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে নির্মিত ছবি।

১৫. হিন্দু মেয়েকে বেঁধে রাখার দৃশ্যকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এই দাবিটিও ভুয়া।

১৬. ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে আসল ঘটনা ভিন্ন।

১৭. হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার দাবি করা হলেও তা ভুয়া।

১৮. বাংলাদেশে মন্দিরে আগুনের ভিডিও দাবিতে ছড়ানো ঘটনাটিও ভুয়া বলে দেখে গেছে।

১৯. ৫০০ হিন্দু হত্যা, শত শত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এমন কোনো তথ্য মূলধারার মিডিয়া বা হিন্দু অধিকার সংগঠনগুলোও দাবি করেনি।

২০. বাংলাদেশে হাসিনার পলায়ন পরবর্তী ঘটনায় মন্দির ভাঙচুরের ছবি বলে দাবি করা হলেও এটি ভুয়া।