ঢাকা ০২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় : ০৯:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩ ৮৮ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয়।
পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরা প্রবণ এলাকা। এলাকাটি দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে ভৌগোলিক ভাবে আলাদা বৈশিষ্ট বহন করে। বৈশ্বিক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতসহ পানি সমস্যা। সেই প্রাকৃতিক উৎসগুলো দিনে দিনে দখল আর নষ্ট হওয়াসহ প্রভাবশালীদের লিজ নেবার কারনে সেখানে প্রান্তিক মানুষ আর আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। একসময় গ্রাম ও শহরের প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করতো। কিন্তু পানির অধিকার নিশ্চত করতে পাচ্ছেনা।

অন্যদিকে উন্নয়নের ভুল পদক্ষেপের কারনে এই অঞ্চলের ভুগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্বকভাবে নীচে নেমে গেছে। যার ফলে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পানির উৎস পাতকুয়া, কুয়া, সেবার নামে আর্থিক মূল্যে পানি বিক্রি করছে এখন। গ্রামগুলোতে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মাফিক পানির অভাব পুকুড়, দিঘি, জলাশয়, টিউবয়েল, নলকুপগুলোতে আর পানি পাওয়া যায়না। এর স্থলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পানি দেখা দিয়েছে মারাত্বকভাবে।

আবার বার বার ধরনা দিয়েও অনেকসময় পানির অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছেনা। তেমন একটি গ্রাম তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়া। এখানে দীর্ঘযুগ থেকে প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী মাহালী সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঁশ বেতের কাজ করে কোনমতে জীবীকা নির্বাহ করেন।

কিন্তু অতিব দুঃখের বিষয় এই গ্রামে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পানির কোন উৎস না থাকায় প্রতিক্ষণে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জনগোষ্টীকে। অনেক দুর থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয়। অভাবের সংসারে পানি কিনে এনে খাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া অনেক দুর থেকে পানি আনতে নারীদের নানা শারীরিক সমস্যাসহ অনেক সময় নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়। স্থানীয় পুকুড় জলাশয়গুলো প্রভাবশালীরা লীজ নিয়ে তাতে রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মাছ চাষ করে এবং সে সকল পুকুড় থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম ঘটনা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় গ্রামগুলোতেই কম বেশি দেখা যায়।

মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো :

তানোর উপজেলার মন্ডুমালার আদিবাসী মাহালী পাড়াতে দ্রুত পর্যাপ্ত ডিপটিউবয়েল-টিউবয়েল-সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে খাবার পানির সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে।

রাজশাহী জেলা তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুড়-দিঘি এবং চলমান জলাভূমি লিজ প্রথা সংশোধন করে সত্যিকারে স্থানীয় প্রান্তিক মানুষের ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে।

গ্রামের ভিতরে বা কাছাকাছি পুকুড়গুলো গ্রাম বাসির নামে-কমিউনিটির নামে বিনাশর্তে লিজ দিতে হবে যাতে কমিউনিটির মানুষগুলো এটি ব্যবহার করতে পারে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল পুকুড়-দিঘিগুলো সংস্কার করে দিতে হবে। যাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারসহ কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। অতএব, আপনার প্রতি আমাদের আবেদন যে, উক্ত দাবিগুলো পুরণে সার্বিক সহযোগীতা করবেন।

এসময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, মাহালী পাড়া বাঁশ বেত উন্নয়ন সংগঠনের চিচিলিয়া হেমব্রোম, বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

আপডেট সময় : ০৯:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয়।
পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরা প্রবণ এলাকা। এলাকাটি দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে ভৌগোলিক ভাবে আলাদা বৈশিষ্ট বহন করে। বৈশ্বিক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতসহ পানি সমস্যা। সেই প্রাকৃতিক উৎসগুলো দিনে দিনে দখল আর নষ্ট হওয়াসহ প্রভাবশালীদের লিজ নেবার কারনে সেখানে প্রান্তিক মানুষ আর আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। একসময় গ্রাম ও শহরের প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করতো। কিন্তু পানির অধিকার নিশ্চত করতে পাচ্ছেনা।

অন্যদিকে উন্নয়নের ভুল পদক্ষেপের কারনে এই অঞ্চলের ভুগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্বকভাবে নীচে নেমে গেছে। যার ফলে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পানির উৎস পাতকুয়া, কুয়া, সেবার নামে আর্থিক মূল্যে পানি বিক্রি করছে এখন। গ্রামগুলোতে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মাফিক পানির অভাব পুকুড়, দিঘি, জলাশয়, টিউবয়েল, নলকুপগুলোতে আর পানি পাওয়া যায়না। এর স্থলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পানি দেখা দিয়েছে মারাত্বকভাবে।

আবার বার বার ধরনা দিয়েও অনেকসময় পানির অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছেনা। তেমন একটি গ্রাম তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়া। এখানে দীর্ঘযুগ থেকে প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী মাহালী সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঁশ বেতের কাজ করে কোনমতে জীবীকা নির্বাহ করেন।

কিন্তু অতিব দুঃখের বিষয় এই গ্রামে খাবার পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পানির কোন উৎস না থাকায় প্রতিক্ষণে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জনগোষ্টীকে। অনেক দুর থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয়। অভাবের সংসারে পানি কিনে এনে খাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া অনেক দুর থেকে পানি আনতে নারীদের নানা শারীরিক সমস্যাসহ অনেক সময় নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়। স্থানীয় পুকুড় জলাশয়গুলো প্রভাবশালীরা লীজ নিয়ে তাতে রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মাছ চাষ করে এবং সে সকল পুকুড় থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম ঘটনা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় গ্রামগুলোতেই কম বেশি দেখা যায়।

মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালী পাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো :

তানোর উপজেলার মন্ডুমালার আদিবাসী মাহালী পাড়াতে দ্রুত পর্যাপ্ত ডিপটিউবয়েল-টিউবয়েল-সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে খাবার পানির সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে।

রাজশাহী জেলা তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুড়-দিঘি এবং চলমান জলাভূমি লিজ প্রথা সংশোধন করে সত্যিকারে স্থানীয় প্রান্তিক মানুষের ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে।

গ্রামের ভিতরে বা কাছাকাছি পুকুড়গুলো গ্রাম বাসির নামে-কমিউনিটির নামে বিনাশর্তে লিজ দিতে হবে যাতে কমিউনিটির মানুষগুলো এটি ব্যবহার করতে পারে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল পুকুড়-দিঘিগুলো সংস্কার করে দিতে হবে। যাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারসহ কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। অতএব, আপনার প্রতি আমাদের আবেদন যে, উক্ত দাবিগুলো পুরণে সার্বিক সহযোগীতা করবেন।

এসময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, মাহালী পাড়া বাঁশ বেত উন্নয়ন সংগঠনের চিচিলিয়া হেমব্রোম, বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।