প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং এবং এর গুরুত্ব
- আপডেট সময় : ১১:২২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪ ১৬২ বার পড়া হয়েছে
স্কাউটিং হল একটি আন্দোলন, যার কাজ আনন্দের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দান। এর মাধ্যমে একজন ছেলে বা মেয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯০৭ সালে রবার্ট স্টিফেন্সন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অফ গিলওয়েল সংক্ষেপে বি.পি লন্ডনে এই আন্দোলনের শুরু করেন। স্কাউটিং এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে অপার আনন্দ যার স্বাদ নিতে হলে যোগদান করতে হবে এই আন্দোলনে।
বাংলাদেশে স্কাউটিংঃ- ১৯৭২ সালের ৮/৯ এপ্রিল সারা দেশের স্কাউট নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ঐ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ১১১ নং অধ্যাদেশ বলে (১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, সোমবার) উক্ত সমিতি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগে প্রবীণ স্কাউটার সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ২২মে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট এসোসিয়েশন। বিশ্ব স্কাউট সংস’া (ডঙঝগ) ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় সমিতির নাম বদলে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস।
স্কাউটিং এর স-রঃ- বাংলাদেশ স্কাউটিং প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত।
১। ৬ থেকে ১০+ বছর বয়সী শিশুদের কাব স্কাউট।
২। স্কুল ও মাদ্রাসার ১১ থেকে ১৬+ বছর বয়সী বালক-বালিকাদের স্কাউট।
৩। কলেজ বিশ্ববিদ্যলয়ের ১৭-২৫ বছর বয়সী যুবক রোভার স্কাউট।
কাব স্কাউটিং কিঃ-
কাব অর্থ শাবক বা বাচ্চা। স্কাউটিং এ নেকড়ে বাঘের বাচ্চাদের কথা বুঝানো হয়েছে। ১৯১৪ সালে উল্ফ কাব নামে কাব স্কাউটিং প্রবর্তিত হয়। যারা কাব স্কাউটিং করে তাদের বলা হয় কাব স্কাউট। যে সকল কিশোর-কিশোরীর বয়স ৬ বছরের বেশি কিন’ ১১ বছরের কম তাদের জন্য কাব স্কাউটিং।
কাব স্কাউটিং নেতৃত্বদানে করে তোলে পারদর্শী। ছোট বেলা থেকেই একটি দলে থাকার মজা এবং কাজগুলো ভাগ করে নেয়ার শিক্ষা দিয়ে দেয় কাব স্কাউটিং। ফলে কাজটা কিভাবে শেষ করা যাবে কিংবা কাকে দিয়ে করালে ভাল হবে, সেই নেতৃত্ব গুণ থাকে একজন কাব স্কাউট এর। ফলে নতুন করে কোনো কিছুই বুঝে নিতে হয়না, জীবনে সকল কাজেই সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে সে। আবার কারো সাথে থেকেও শেষ করতে পারে যে কোন কাজ। এ সকল গুণের স্বীকৃতি স্বরূপ কাব স্কাউটদের দেয়া হয় শাপলা কাব এ্যাওয়ার্ড।
কাব স্কাউট প্রতিজ্ঞা ঃ
আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আল্লাহ ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে, প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করতে, কাব স্কাউট আইন মেনে চলতে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
(অন্য ধর্মালম্বীগণ ‘‘আল্লাহ’’ শব্দের পরিবর্তে নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস মতে সৃষ্টিকর্তার নাম উচ্চারণ করতে পারে)
-ঃ কাব স্কাউট আইন ঃ-
১. বড়দের কথা মেনে চলা।
২. নিজেদের খেয়ালে কিছু না করা।
কাব স্কাউট মটো ঃ- ‘‘যথাসাধ্য চেষ্টা করা’’
কাব স্কাউট সালাম, স্কাউট চিহ্ন এবং করমর্দন। কাব স্কাউটরা বিশেষ কায়দায় তিন আঙ্গুলে স্কাউট সালাম ও চিহ্ন প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশে যথারীতি ডান হাতে করমর্দন করা হয়, তবে কোন কোন দেশে স্কাউটরা বাম হাতে করমর্দন করে থাকে।
কাব স্কাউটের গুরুত্বঃ-
বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স সাধারনত ৬ থেকে ১১ বছর। এই বয়সী শিশুদের পাঠক্রম এর সাথে কাব স্কাউট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ তাদেরকে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী, সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। কাব স্কাউটিং পড়ার পাশাপাশি আনন্দের মাধ্যমে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে সাহায্য করে। কাব স্কাউটিং শিশুকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলে। অপরকে সাহায্য করার মনোভাব শিশু বয়স থেকেই গড়ে ওঠে। একজন কাব স্কাউট দেশ ও আন-র্জাতিক পরিমন্ডল সম্পর্কে জানতে পারে। কাব স্কাউটরা পরবর্তীতে যোগ্য নাগরিক হয়ে সঠিক পথে সমাজ ও দেশকে পরিচালিত করতে পারে। বাংলাদেশ এর আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউট এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য।
তথ্যঃ জানতে চাই, জানাতে চাই-কাবিং করি, জীবন গড়ি। * স্কাউটিং *বাংলাদেশ স্কাউটিং।
লেখকঃ- মনিকা পারভীন , উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সদর ময়মনসিংহ।