ঢাকা ১০:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের জীবন সংগ্রামের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক//
  • আপডেট সময় : ০৪:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৫ বার পড়া হয়েছে

নিজে ইচ্ছা করলে করতে পারেন অনেক কিছু। বাঁচতে পারেন সম্মান নিয়ে। এমন একজন জীবন সংগ্রামী মানুষ হলেন রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার খোলাবোনা গ্রামের পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামান মাস্টার (৭২)। বয়সের ভার এখনো থামাতে পারেনি তাকে। দিন-রাত, রোদ-বৃষ্টি, গরম-শীত, মৌসুমি নিম্নচাপসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ।
৩৮ বছর ধরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে খবরের কাগজ বিক্রি করে পরিবারকে অন্নের জোগান দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন ভোরে গাড়ি থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে পৌঁছে দিতেন বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নস্থানে। শুরুতে অনেকে বাঁধা-বিপত্তি উপক্ষো করে নিজের মতো করে এগিয়ে গেছেন মনিরুজ্জামান। মনিরুজ্জামান পবা উপজেলার খোলাবোনা গ্রামের মৃত জার্জিস সরকারের ছেলে।
সমাজ সেবক, শিক্ষা অনুরাগী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী, বিনয়ী, পাঠকদের প্রিয় মুখ পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামান মাস্টারের সংগ্রামী জীবনের গল্পের কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান ১৯৫২ সালে তার জন্ম। ৯ ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। পত্রিক সূত্রে পাওয়া বাড়ি ভিটা সহকাওে ২ বিঘা জমি আছে তার। ১৯৭০ সালে রাজশাহী হাই মাদরাসা থেকে এস,এস,সি পাস করেন মনিরুজ্জামান। নিজ উপজেলার খোলাবোনা দাখিল মাদ্রাসায় শুরু করেন শিক্ষকতা। ওই মাদ্রাসায় ১৮ বছর যাবত শিক্ষকতা কওে বেতন ভাতা ছাড়াই। বেতনভাতা না পাওয়াই ওই মাদ্রাসার শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে ১৯৮৬ সালে নতুন পেশো বেছে নিয়ে মনিরুজজামান শুরু করেন পাঠকদের নিকট পত্রিকা বিক্রয়ের কাজ। মাদ্রাসার মাষ্টার থেকে হয়ে উঠেন পত্রিকা বিক্রেতা। মনিরুজ্জামান আরো জানান বর্তমানে তিনি ৮ সন্তানের জনক। এর মধ্যে ৬টি মেয়ে ও ২টি ছেলে। এদের মধ্যে ৪ মেয়েকে মাস্টার্স কমপ্লিট করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন পত্রিকা বিক্রয়ের আয় থেকেই। বাকি দুই মেয়ে ও দুই ছেলে বর্তমানে বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করছে।
মনিরুজ্জামান বলেন এ পেশায় বছর দশেক আগে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হতো। কিন্তু বয়সের ভারে বর্তমানে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা আয় করাটাই অনেক কষ্টকর হয়ে গেছে তার জন্য। মানুষ এখন আর আগের মত পত্রিকা পড়ে না। এছাড়াও বর্তমানে অন্য পেশাতে যাওয়ার আর বয়স নেই। যতদিন জীবিত আছেন, ততদিন জীবন সংগ্রামে এই পেশায় যুক্ত থাকবেন বলে জানান ৭২ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের জীবন সংগ্রামের গল্প

আপডেট সময় : ০৪:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

নিজে ইচ্ছা করলে করতে পারেন অনেক কিছু। বাঁচতে পারেন সম্মান নিয়ে। এমন একজন জীবন সংগ্রামী মানুষ হলেন রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার খোলাবোনা গ্রামের পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামান মাস্টার (৭২)। বয়সের ভার এখনো থামাতে পারেনি তাকে। দিন-রাত, রোদ-বৃষ্টি, গরম-শীত, মৌসুমি নিম্নচাপসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ।
৩৮ বছর ধরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে খবরের কাগজ বিক্রি করে পরিবারকে অন্নের জোগান দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন ভোরে গাড়ি থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে পৌঁছে দিতেন বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নস্থানে। শুরুতে অনেকে বাঁধা-বিপত্তি উপক্ষো করে নিজের মতো করে এগিয়ে গেছেন মনিরুজ্জামান। মনিরুজ্জামান পবা উপজেলার খোলাবোনা গ্রামের মৃত জার্জিস সরকারের ছেলে।
সমাজ সেবক, শিক্ষা অনুরাগী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী, বিনয়ী, পাঠকদের প্রিয় মুখ পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামান মাস্টারের সংগ্রামী জীবনের গল্পের কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান ১৯৫২ সালে তার জন্ম। ৯ ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। পত্রিক সূত্রে পাওয়া বাড়ি ভিটা সহকাওে ২ বিঘা জমি আছে তার। ১৯৭০ সালে রাজশাহী হাই মাদরাসা থেকে এস,এস,সি পাস করেন মনিরুজ্জামান। নিজ উপজেলার খোলাবোনা দাখিল মাদ্রাসায় শুরু করেন শিক্ষকতা। ওই মাদ্রাসায় ১৮ বছর যাবত শিক্ষকতা কওে বেতন ভাতা ছাড়াই। বেতনভাতা না পাওয়াই ওই মাদ্রাসার শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে ১৯৮৬ সালে নতুন পেশো বেছে নিয়ে মনিরুজজামান শুরু করেন পাঠকদের নিকট পত্রিকা বিক্রয়ের কাজ। মাদ্রাসার মাষ্টার থেকে হয়ে উঠেন পত্রিকা বিক্রেতা। মনিরুজ্জামান আরো জানান বর্তমানে তিনি ৮ সন্তানের জনক। এর মধ্যে ৬টি মেয়ে ও ২টি ছেলে। এদের মধ্যে ৪ মেয়েকে মাস্টার্স কমপ্লিট করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন পত্রিকা বিক্রয়ের আয় থেকেই। বাকি দুই মেয়ে ও দুই ছেলে বর্তমানে বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করছে।
মনিরুজ্জামান বলেন এ পেশায় বছর দশেক আগে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হতো। কিন্তু বয়সের ভারে বর্তমানে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা আয় করাটাই অনেক কষ্টকর হয়ে গেছে তার জন্য। মানুষ এখন আর আগের মত পত্রিকা পড়ে না। এছাড়াও বর্তমানে অন্য পেশাতে যাওয়ার আর বয়স নেই। যতদিন জীবিত আছেন, ততদিন জীবন সংগ্রামে এই পেশায় যুক্ত থাকবেন বলে জানান ৭২ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ পত্রিকা বিক্রেতা মনিরুজ্জামান।