ঢাকা ১১:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

নেত্রকোনার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই মাস বন্ধ অ্যাম্বুলেন্স সেবা

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ১০:১৯:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ ১৪ বার পড়া হয়েছে

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি রোগীদের কোনো কাজেই আসছে না। চালকের অভাবে তা অব্যাহতভাবে পড়ে রয়েছে।

উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যা দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পাশের কলমাকান্দা ও ধোবাউড়া উপজেলার লোকজনও চিকিৎসা নেন এখানে। কিন্তু এত এত মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেন্স মাত্র একটি। এখন সেটিও চালানোর লোক নেই। এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে মানুষকে ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, মাইক্রোবাস অন্য যানবাহনের ওপর। এতে বাড়তি ভাড়া ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালককে দুই বছর আগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন দীর্ঘ দিন অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার জিপ গাড়ির চালক দিয়েই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চালানো হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জিপ গাড়ির চালককেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগেও গত বছরের ৯ জানুয়ারি ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সময় এক নবজাতকের মৃত্যু ঘটনায় ওই জিপ গাড়ির চালককে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানো থেকে সরিয়ে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি। তবে তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি, তখন চালক না থাকায় পুনরায় তাকে চালক হিসেবে বহাল রাখা হয়। এবার আবারও সেই জিপ গাড়ির চালককে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে দুই মাস আগে। যার কারণে গত দুই মাস ধরে রোগী বহন বন্ধ হয়ে গ্যারেজ বন্দী হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে চিকিৎসাসেবার জন্য হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ১৯৯৬ সালে ২টি, ২০০০ সালে ১টি ও ২০০৬ সালে ১টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। তবে শুরুতে দু’টি অ্যাম্বুলেন্স পাঁচ বছরের মাথায় আগুনে পুড়ে যায়। এরপর বাকি ২টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ২০১২ সাল নাগাদ অচল হয়ে পরিষেবা বন্ধ হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দেওয়া ১টি অ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও এখন চালকের অভাবে দুই মাস ধরে বন্ধ হয়ে গ্যারেজ বন্দি হয়ে পড়ে আছে।

এদিকে তথ্য বলছে,সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে দুর্গাপুর থেকে ময়মনসিংহ যেতে রোগীদের খরচ হয় ১২৩০ টাকা। তবে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স গেলে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা গুনতে হয়। কেউ কেউ অর্থ অভাবে রোগীকে জরুরি ময়মনসিংহ নিয়ে যেতে বিলম্বনায় পড়তে হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালু না থাকার কারণে বিকল্প ব্যবস্থায় বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তাই দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের চালক দেওয়ার দাবি জানান তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. তানজিরুল ইসলাম রায়হান বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের যে মূল চালক ছিল তাকে দুই বছর আগে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর আর নতুন কোনো চালক নেওয়া হয়নি। সরকারি জিপ গাড়ির চালক দিয়েই চালানো হয়েছে। এবার ওই চালককেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। যার কারণে দুই মাস ধরে বন্ধ হয়ে গেছে রোগী পরিবহন।

তিনি আরও বলেন, চালক নিয়োগের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো চালক পদায়ন হয়নি।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, আমরা একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আছি। তারপরও জরুরি বিষয় যেহেতু এটি সেজন্য বিভাগীয় স্যারের সঙ্গে কথা বলে উনার নির্দেশনায় এটা চালু করার বিষয়ে দেখি কি করা যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নেত্রকোনার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই মাস বন্ধ অ্যাম্বুলেন্স সেবা

আপডেট সময় : ১০:১৯:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি রোগীদের কোনো কাজেই আসছে না। চালকের অভাবে তা অব্যাহতভাবে পড়ে রয়েছে।

উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যা দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পাশের কলমাকান্দা ও ধোবাউড়া উপজেলার লোকজনও চিকিৎসা নেন এখানে। কিন্তু এত এত মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেন্স মাত্র একটি। এখন সেটিও চালানোর লোক নেই। এ অবস্থায় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে মানুষকে ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, মাইক্রোবাস অন্য যানবাহনের ওপর। এতে বাড়তি ভাড়া ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালককে দুই বছর আগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন দীর্ঘ দিন অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার জিপ গাড়ির চালক দিয়েই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চালানো হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জিপ গাড়ির চালককেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগেও গত বছরের ৯ জানুয়ারি ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সময় এক নবজাতকের মৃত্যু ঘটনায় ওই জিপ গাড়ির চালককে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানো থেকে সরিয়ে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি। তবে তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি, তখন চালক না থাকায় পুনরায় তাকে চালক হিসেবে বহাল রাখা হয়। এবার আবারও সেই জিপ গাড়ির চালককে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে দুই মাস আগে। যার কারণে গত দুই মাস ধরে রোগী বহন বন্ধ হয়ে গ্যারেজ বন্দী হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে চিকিৎসাসেবার জন্য হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ১৯৯৬ সালে ২টি, ২০০০ সালে ১টি ও ২০০৬ সালে ১টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। তবে শুরুতে দু’টি অ্যাম্বুলেন্স পাঁচ বছরের মাথায় আগুনে পুড়ে যায়। এরপর বাকি ২টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ২০১২ সাল নাগাদ অচল হয়ে পরিষেবা বন্ধ হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দেওয়া ১টি অ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও এখন চালকের অভাবে দুই মাস ধরে বন্ধ হয়ে গ্যারেজ বন্দি হয়ে পড়ে আছে।

এদিকে তথ্য বলছে,সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে দুর্গাপুর থেকে ময়মনসিংহ যেতে রোগীদের খরচ হয় ১২৩০ টাকা। তবে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স গেলে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা গুনতে হয়। কেউ কেউ অর্থ অভাবে রোগীকে জরুরি ময়মনসিংহ নিয়ে যেতে বিলম্বনায় পড়তে হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালু না থাকার কারণে বিকল্প ব্যবস্থায় বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তাই দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের চালক দেওয়ার দাবি জানান তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. তানজিরুল ইসলাম রায়হান বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের যে মূল চালক ছিল তাকে দুই বছর আগে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর আর নতুন কোনো চালক নেওয়া হয়নি। সরকারি জিপ গাড়ির চালক দিয়েই চালানো হয়েছে। এবার ওই চালককেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। যার কারণে দুই মাস ধরে বন্ধ হয়ে গেছে রোগী পরিবহন।

তিনি আরও বলেন, চালক নিয়োগের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো চালক পদায়ন হয়নি।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, আমরা একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আছি। তারপরও জরুরি বিষয় যেহেতু এটি সেজন্য বিভাগীয় স্যারের সঙ্গে কথা বলে উনার নির্দেশনায় এটা চালু করার বিষয়ে দেখি কি করা যায়।