ঢাকা ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পুঠিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ কম

নীল দিগন্তজুড়ে দেখা মিলছে হলুদ সরিষার জমিন

মোঃ মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে

দেশে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধিতে বেড়েছে সরিষার কদর। চলতি বছর রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা জুরে সরিষার চাষাবাদ কম হলেও আগাম জাতের সরিষা ক্ষেত এরই মধ্যে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ ফসলী মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের সমাহার দিনে দিনে বাড়ছে। বারী ও হাইব্রিড জাতের সরিষার ক্ষেতে ফুল আসার অপেক্ষায় রয়েছে মৌয়ালরা। উপজেলার শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছীতে এবার বেশি চাষ হয়েছে সরিষার। চারদিকে সরিষার হলুদ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। কৃষকরা আশা করছেন সরিষার বাম্পার ফলনের। কিন্তু উপজেলার বানেশ্বর, বেলপুকুর, পুঠিয়া, জিউপাড়া ইউনিয়নের মধ্যে এবার কম চাষ হয়েছে সরিষার।

এই এলাকার চাষিরা বলছেন এবার রসুন ও পেঁয়াজের দাম ভালো হওয়ায় আমরা সবাই সরিষা চাষ বাদ দিয়ে রসুন ও পেঁয়াজ চাষবাদ করছি। যদি এই ফসলের দাম আশানুরূপ না পাই তাহলে সামনে বার পুনরায় সরিষা চাষ করবো।

পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া এলাকার চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, এবারে অভাবনীয় সাফল্যের আশায় বুক বেঁধেছেন চাষিরা। সরিষা ক্ষেতে চাষীদের চোখে মুখে সেই যেন আনন্দের হাসি।

উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের সরিষা চাষী জমসেদ আলী জানান, এবারে ভাল ফলন হবে। তবে সরিষার ফলনে দৃষ্টি যেন জুড়িয়ে যায়। শীতে সরিষা চাষে কোন সমস্যা হচ্ছে না। ফলন ভাল হবে। প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৮মন সরিষা উঠতে পারে। অন্য ইউনিয়নে তেমন সরিষা চাষ হচ্ছে না আপনারা কেন চাষে আগ্রহ জানতে চাইলে সোনার দেশকে জানান, রসুন পেঁয়াজ চাষে অনেক টাকা খরচ ও পরিশ্রম কারতে হয়। আবার শিলা বৃষ্টির একটি বড় সমস্যা তাই চিন্তা না করে অল্প খরচ ও পরিশ্রমে সরিষায় ভালো লাভ পায় আমরা।
স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দিন দিন সরিষার আবাদ বাড়ছে। জমিতে জো আসার পর কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে অগ্রহায়নের মাঝামাঝি বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-১৪, ১৫, বিনা-১৬, বিনা-৪, বিনা-৯, মাঘি সরিষা ও রাই সরিষা রয়েছে এর মধ্যে। বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তুলতে সময় লাগে ৩ মাসের মতো। শীত কুয়াশায় সরষের ফলন ভালো হয়।

জানা গেছে, সাধারণত নিচু জমিতেই সরষের আবাদ হয়ে থাকে। কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নরম মাটিতে সরষে বীজ বপন করা যায়। তবে বীজ রোপনের আগে অনেক জমিতে চাষ দিতে হয়। সারও দিতে হয়। অবশ্য নিড়ানির খরচ লাগে না এতে। খরচ এবং পরিশ্রম অন্য ফসলের চেয়ে তুলনামুলক কম লাগে বিধায় সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। সরিষা হতে তেল ছাড়াও পাওয়া যায় খৈল যা গবাদি পশুর পুষ্টিকর প্রিয় খাদ্য। আবার এই খৈল হতে ভালো সারও হয়। সরষে গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার হয়। আর বারী ও হাইব্রিড জাতের বড় বড় সরিষা গাছে হলুদ ফুল আসার পর ক্ষেত ঘিরে বাণিজ্যিকভাবে অনেকস্থানে মধু আহরণ করা হয়। পুঠিয়া উপজেলায় এবছর এখনও এমনভাবে মৌয়ালদের দেখা না গেলেও আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে। সরিষা ফুলের মধুর দারুণ কদর রয়েছে। দামও পাওয়া যায় বেশ ভালো।
এব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রানী সরকার জানান, এ মৌসুমে উপজেলাতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৫ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এবছর রসুন, পেঁয়াজের দাম ভালো দেখে বেশির ভাগ চাষিরাই সরিষা চাষে এবার আগ্রহ হারিয়ে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এবার রসুন পেঁয়াজ চাষ করে ভালো করতে না পারলে সামনে বার আবার লক্ষমাত্রা অর্জন হবে আশা করি। যা গত বছর চাষ হয়েছিলো ৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। যার পুরোট চাষাবাদ অর্জন হয়েছিলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পুঠিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ কম

নীল দিগন্তজুড়ে দেখা মিলছে হলুদ সরিষার জমিন

আপডেট সময় : ০৯:৪০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

দেশে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধিতে বেড়েছে সরিষার কদর। চলতি বছর রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা জুরে সরিষার চাষাবাদ কম হলেও আগাম জাতের সরিষা ক্ষেত এরই মধ্যে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ ফসলী মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের সমাহার দিনে দিনে বাড়ছে। বারী ও হাইব্রিড জাতের সরিষার ক্ষেতে ফুল আসার অপেক্ষায় রয়েছে মৌয়ালরা। উপজেলার শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছীতে এবার বেশি চাষ হয়েছে সরিষার। চারদিকে সরিষার হলুদ রঙে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। কৃষকরা আশা করছেন সরিষার বাম্পার ফলনের। কিন্তু উপজেলার বানেশ্বর, বেলপুকুর, পুঠিয়া, জিউপাড়া ইউনিয়নের মধ্যে এবার কম চাষ হয়েছে সরিষার।

এই এলাকার চাষিরা বলছেন এবার রসুন ও পেঁয়াজের দাম ভালো হওয়ায় আমরা সবাই সরিষা চাষ বাদ দিয়ে রসুন ও পেঁয়াজ চাষবাদ করছি। যদি এই ফসলের দাম আশানুরূপ না পাই তাহলে সামনে বার পুনরায় সরিষা চাষ করবো।

পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া এলাকার চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, এবারে অভাবনীয় সাফল্যের আশায় বুক বেঁধেছেন চাষিরা। সরিষা ক্ষেতে চাষীদের চোখে মুখে সেই যেন আনন্দের হাসি।

উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের সরিষা চাষী জমসেদ আলী জানান, এবারে ভাল ফলন হবে। তবে সরিষার ফলনে দৃষ্টি যেন জুড়িয়ে যায়। শীতে সরিষা চাষে কোন সমস্যা হচ্ছে না। ফলন ভাল হবে। প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৮মন সরিষা উঠতে পারে। অন্য ইউনিয়নে তেমন সরিষা চাষ হচ্ছে না আপনারা কেন চাষে আগ্রহ জানতে চাইলে সোনার দেশকে জানান, রসুন পেঁয়াজ চাষে অনেক টাকা খরচ ও পরিশ্রম কারতে হয়। আবার শিলা বৃষ্টির একটি বড় সমস্যা তাই চিন্তা না করে অল্প খরচ ও পরিশ্রমে সরিষায় ভালো লাভ পায় আমরা।
স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দিন দিন সরিষার আবাদ বাড়ছে। জমিতে জো আসার পর কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে অগ্রহায়নের মাঝামাঝি বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-১৪, ১৫, বিনা-১৬, বিনা-৪, বিনা-৯, মাঘি সরিষা ও রাই সরিষা রয়েছে এর মধ্যে। বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তুলতে সময় লাগে ৩ মাসের মতো। শীত কুয়াশায় সরষের ফলন ভালো হয়।

জানা গেছে, সাধারণত নিচু জমিতেই সরষের আবাদ হয়ে থাকে। কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির আগাছা পরিষ্কার করে নরম মাটিতে সরষে বীজ বপন করা যায়। তবে বীজ রোপনের আগে অনেক জমিতে চাষ দিতে হয়। সারও দিতে হয়। অবশ্য নিড়ানির খরচ লাগে না এতে। খরচ এবং পরিশ্রম অন্য ফসলের চেয়ে তুলনামুলক কম লাগে বিধায় সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। সরিষা হতে তেল ছাড়াও পাওয়া যায় খৈল যা গবাদি পশুর পুষ্টিকর প্রিয় খাদ্য। আবার এই খৈল হতে ভালো সারও হয়। সরষে গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার হয়। আর বারী ও হাইব্রিড জাতের বড় বড় সরিষা গাছে হলুদ ফুল আসার পর ক্ষেত ঘিরে বাণিজ্যিকভাবে অনেকস্থানে মধু আহরণ করা হয়। পুঠিয়া উপজেলায় এবছর এখনও এমনভাবে মৌয়ালদের দেখা না গেলেও আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে। সরিষা ফুলের মধুর দারুণ কদর রয়েছে। দামও পাওয়া যায় বেশ ভালো।
এব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রানী সরকার জানান, এ মৌসুমে উপজেলাতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৫ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এবছর রসুন, পেঁয়াজের দাম ভালো দেখে বেশির ভাগ চাষিরাই সরিষা চাষে এবার আগ্রহ হারিয়ে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এবার রসুন পেঁয়াজ চাষ করে ভালো করতে না পারলে সামনে বার আবার লক্ষমাত্রা অর্জন হবে আশা করি। যা গত বছর চাষ হয়েছিলো ৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। যার পুরোট চাষাবাদ অর্জন হয়েছিলো।