ঢাকা ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‌‍‌‌”তিল চাষের কলাকৌশল”

লেখক: অতনু সরকার
  • আপডেট সময় : ০৩:৫১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৩০২ বার পড়া হয়েছে

তিল চাষের এখনই উপযুক্ত সময়। তেলের চাহিদা পূরণে আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষক ভাইয়েরা সরিষা,গম,ভুট্টা কাটার পর,আলু তোলার পর জমিতে তিল চাষ করতে পারেন।
তিল চাষের কলাকৌশল :
জমি ফেলে না-রেখে এই বসন্তে তিল চাষ করা যায় খুব সহজেই।
খাবার তেল হিসাবে সর্ষের তেলের তুলনায় তিল তেল বেশি স্বাস্থ্যকর। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা ও নানান মুখরোচক খাবারও যথেষ্ট জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিলের কদর বাড়ছে দিন দিন। তাই এই বসন্তে জমি ফেলে না রেখে অল্প দিনে বেশি উৎপাদন দিতে সক্ষম ও খরা সহনশীল ফসল তিল চাষ করা যেতে পারে।
খাবার তেল হিসাবে সর্ষের তেলের তুলনায় তিল তেল বেশি স্বাস্থ্যকর। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা ও নানান মুখরোচক খাবারও যথেষ্ট জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিলের কদর বাড়ছে দিন দিন। তাই এই বসন্তে জমি ফেলে না রেখে অল্প দিনে বেশি উৎপাদন দিতে সক্ষম ও খরা সহনশীল ফসল তিল চাষ করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বাড়তি আয় হয় তেমনই ফসলের আচ্ছাদনে মাটির রস ও জৈব কার্বন সংরক্ষিত থাকায় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।

• উন্নত জাত
বারি তিল -১ -৮০-৮৫ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪০%, কালচে বাদািম। বিনা তিল — ৮৫-৯০ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪৫%, বাদামি রঙের বীজ।

• মাটি
ভারী মাটি বাদ দিলে, জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত এই রাজ্যের প্রায় সব ধরনের মাটিতে তিল চাষ করা যায়। তবে বেলে-দোঁয়াশ ও পলি-দোঁয়াশ মাটি বিশেষ উপযোগী।

• বোনার সময়

উপযুক্ত সময় হল ফাল্গুন মাস। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোনা শেষ করলে ভাল হয়। কারণ দেরিতে বীজ বুনলে ফলন কমে যায়।

বীজ বপন :

ছিটিয়ে বুনলে একর প্রতি ৩ কেজি আর লাইনে বুনলে ২.৫ কেজি। বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কারবেন্ডাজিম ৫০% বা ৩ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫% বা ৩ গ্রাম থাইরাম ৭৫% জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে।

• বপন

তিল বীজ ছোট হওয়ায় মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব থাকলে হালকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করা প্রয়োজন। জমি তৈরির সময় পর্যাপ্ত জৈব সারের সঙ্গে একর প্রতি ২ কেজি ট্রাইকোডারমা ভিরিডি জৈব ছত্রাকনাশক জীবাণু সার প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমে।

সারিতে বুনলে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ১০-১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজ ৪ ইঞ্চি। ছিটিয়ে বুনলে মই দিয়ে বীজকে ভাল ভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে তিল বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। দেখতে হবে, নিড়ানি দেওয়ার পর প্রতি বর্গমিটারে গড়ে যেন ৪০-৪৫টি গাছ থাকে।

• সার প্রয়োগ

আলু চাষের পর তিল চাষ করলে সার না দিলেও চলে। মাটির উর্বরতা স্বাভাবিক থাকলে সেচ দেওয়া জমিতে সারের হিসাব এই রকম :-

মূল সার— এন.পি.কে ১০:২৬:২৬ – ৪৬ কেজি বা (শেষ চাষের আগে) ডি.এ.পি ৭৫ কেজি + এম.ও.পি ২০ কেজি + ইউরিয়া ২৬ কেজি একর প্রতি।

উপরি সার প্রয়োগ — একর প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া ফুলের কুঁড়ি আসার আগে (বোনার ২৮-৩০ দিনে)।

সেচ ছাড়া তিল চাষের জমিতে ইউরিয়া উপরি সার প্রয়োগ না দিলেও চলে। একর প্রতি ২.৫ কেজি বোরন (১৪.৬%) অনুখাদ্য প্রয়োগে বাড়তি সুফল পাওয়া যায়। ৩০ দিনের মাথায় ১% হারে ১৮:১৮:১৮ স্প্রে করলে ফসল পায় পরিপূরক পুষ্টি।

• সেচ

তিল কম জলে চাষের ফসল। একটি সেচের সংস্থান থাকলে ৩০ দিনের মাথায় এবং ২টি সেচের সুযোগ থাকলে দ্বিতীয়টি ৫০-৫৫ দিনের মাথায় দানা বাঁধার সময় দিতে হবে।

• সুসংহত শস্য রক্ষা

গোড়া পচা, ডাঁটা পচা ও সাদা গুঁড়ো রোগ আক্রান্ত ফসলে কারবেন্ডাজিম ৫০% ১ গ্রাম বা ম্যানকোজেব ৭৫% ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফাইলোডি আক্রান্ত গাছের উপরভাগ চ্যাপ্টা হয়ে যায়, ফুলগুলো পাতার মতো হয়। ফুল-ফল হয় না। এটা শ্যামা পোকা বাহিত মাইকোপ্লাজমা ঘটিত রোগ। এই রোগ ও পাতা মোড়া রোগ দমনে প্রথমে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে। পরে জমিতে বাহক পোকা দমনের জন্য ডাইমিথোরেট ২ মিলি/লিটার জলে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকা, লেদা ও ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে ৩৩% গাছ আক্রান্ত হলে তবেই অ্যাসিফেট ৭৫% (০.৭৫ গ্রাম) বা প্রফেনোফস ৫০%(১.৫ মিলি) প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

• ফসল কাটা

গাছের মাঝামাঝি অংশের শুঁটি ভেঙে দানা পুষ্ট হয়েছে দেখলে ফসল কেটে কয়েকদিন জাঁক দিয়ে এবং ঝাড়াই মাড়াই করে ও শুকিয়ে রাখতে হবে। ভাল পরিচর্যা করলে  একর প্রতি ৫৫০–৬৫০ কেজি ফলন মিলতে পারে।

লেখক: অতনু সরকার
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

‌‍‌‌”তিল চাষের কলাকৌশল”

আপডেট সময় : ০৩:৫১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

তিল চাষের এখনই উপযুক্ত সময়। তেলের চাহিদা পূরণে আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষক ভাইয়েরা সরিষা,গম,ভুট্টা কাটার পর,আলু তোলার পর জমিতে তিল চাষ করতে পারেন।
তিল চাষের কলাকৌশল :
জমি ফেলে না-রেখে এই বসন্তে তিল চাষ করা যায় খুব সহজেই।
খাবার তেল হিসাবে সর্ষের তেলের তুলনায় তিল তেল বেশি স্বাস্থ্যকর। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা ও নানান মুখরোচক খাবারও যথেষ্ট জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিলের কদর বাড়ছে দিন দিন। তাই এই বসন্তে জমি ফেলে না রেখে অল্প দিনে বেশি উৎপাদন দিতে সক্ষম ও খরা সহনশীল ফসল তিল চাষ করা যেতে পারে।
খাবার তেল হিসাবে সর্ষের তেলের তুলনায় তিল তেল বেশি স্বাস্থ্যকর। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা ও নানান মুখরোচক খাবারও যথেষ্ট জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিলের কদর বাড়ছে দিন দিন। তাই এই বসন্তে জমি ফেলে না রেখে অল্প দিনে বেশি উৎপাদন দিতে সক্ষম ও খরা সহনশীল ফসল তিল চাষ করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন বাড়তি আয় হয় তেমনই ফসলের আচ্ছাদনে মাটির রস ও জৈব কার্বন সংরক্ষিত থাকায় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।

• উন্নত জাত
বারি তিল -১ -৮০-৮৫ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪০%, কালচে বাদািম। বিনা তিল — ৮৫-৯০ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪৫%, বাদামি রঙের বীজ।

• মাটি
ভারী মাটি বাদ দিলে, জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত এই রাজ্যের প্রায় সব ধরনের মাটিতে তিল চাষ করা যায়। তবে বেলে-দোঁয়াশ ও পলি-দোঁয়াশ মাটি বিশেষ উপযোগী।

• বোনার সময়

উপযুক্ত সময় হল ফাল্গুন মাস। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোনা শেষ করলে ভাল হয়। কারণ দেরিতে বীজ বুনলে ফলন কমে যায়।

বীজ বপন :

ছিটিয়ে বুনলে একর প্রতি ৩ কেজি আর লাইনে বুনলে ২.৫ কেজি। বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কারবেন্ডাজিম ৫০% বা ৩ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫% বা ৩ গ্রাম থাইরাম ৭৫% জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে।

• বপন

তিল বীজ ছোট হওয়ায় মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব থাকলে হালকা সেচ দিয়ে জমি তৈরি করা প্রয়োজন। জমি তৈরির সময় পর্যাপ্ত জৈব সারের সঙ্গে একর প্রতি ২ কেজি ট্রাইকোডারমা ভিরিডি জৈব ছত্রাকনাশক জীবাণু সার প্রয়োগ করলে রোগের প্রকোপ কমে।

সারিতে বুনলে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ১০-১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজ ৪ ইঞ্চি। ছিটিয়ে বুনলে মই দিয়ে বীজকে ভাল ভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে তিল বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। দেখতে হবে, নিড়ানি দেওয়ার পর প্রতি বর্গমিটারে গড়ে যেন ৪০-৪৫টি গাছ থাকে।

• সার প্রয়োগ

আলু চাষের পর তিল চাষ করলে সার না দিলেও চলে। মাটির উর্বরতা স্বাভাবিক থাকলে সেচ দেওয়া জমিতে সারের হিসাব এই রকম :-

মূল সার— এন.পি.কে ১০:২৬:২৬ – ৪৬ কেজি বা (শেষ চাষের আগে) ডি.এ.পি ৭৫ কেজি + এম.ও.পি ২০ কেজি + ইউরিয়া ২৬ কেজি একর প্রতি।

উপরি সার প্রয়োগ — একর প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া ফুলের কুঁড়ি আসার আগে (বোনার ২৮-৩০ দিনে)।

সেচ ছাড়া তিল চাষের জমিতে ইউরিয়া উপরি সার প্রয়োগ না দিলেও চলে। একর প্রতি ২.৫ কেজি বোরন (১৪.৬%) অনুখাদ্য প্রয়োগে বাড়তি সুফল পাওয়া যায়। ৩০ দিনের মাথায় ১% হারে ১৮:১৮:১৮ স্প্রে করলে ফসল পায় পরিপূরক পুষ্টি।

• সেচ

তিল কম জলে চাষের ফসল। একটি সেচের সংস্থান থাকলে ৩০ দিনের মাথায় এবং ২টি সেচের সুযোগ থাকলে দ্বিতীয়টি ৫০-৫৫ দিনের মাথায় দানা বাঁধার সময় দিতে হবে।

• সুসংহত শস্য রক্ষা

গোড়া পচা, ডাঁটা পচা ও সাদা গুঁড়ো রোগ আক্রান্ত ফসলে কারবেন্ডাজিম ৫০% ১ গ্রাম বা ম্যানকোজেব ৭৫% ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফাইলোডি আক্রান্ত গাছের উপরভাগ চ্যাপ্টা হয়ে যায়, ফুলগুলো পাতার মতো হয়। ফুল-ফল হয় না। এটা শ্যামা পোকা বাহিত মাইকোপ্লাজমা ঘটিত রোগ। এই রোগ ও পাতা মোড়া রোগ দমনে প্রথমে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে। পরে জমিতে বাহক পোকা দমনের জন্য ডাইমিথোরেট ২ মিলি/লিটার জলে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকা, লেদা ও ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে ৩৩% গাছ আক্রান্ত হলে তবেই অ্যাসিফেট ৭৫% (০.৭৫ গ্রাম) বা প্রফেনোফস ৫০%(১.৫ মিলি) প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

• ফসল কাটা

গাছের মাঝামাঝি অংশের শুঁটি ভেঙে দানা পুষ্ট হয়েছে দেখলে ফসল কেটে কয়েকদিন জাঁক দিয়ে এবং ঝাড়াই মাড়াই করে ও শুকিয়ে রাখতে হবে। ভাল পরিচর্যা করলে  একর প্রতি ৫৫০–৬৫০ কেজি ফলন মিলতে পারে।

লেখক: অতনু সরকার
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার