ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তানোরে নিউ মডার্ণ ক্লিনিকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বাণিজ্যের অভিযোগ!

আশরাফুল আলম, তানোর (রাজশাহী) প্রতিবেদকঃ
  • আপডেট সময় : ১১:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৮ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীর তানোরে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা ‘নিউ মডার্ণ ক্লিনিকে’র বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও একশ্রেণির পল্লী চিকিৎসক রোগি ধরা দালাল হিসেবে কাজ করছে। রোগি প্রতি কমিশনের আশায় এসব দালালরা অভিনব কৌশল ও প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগি বাগিয়ে নিয়ে নিউ মডার্ণ ক্লিনিকে ভর্তি করছে।

তখন চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। অধিকাংশে মালিক-কর্মচারিরা চিকিৎসক সেজে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও এখানে নারী সঙ্গ উপভোগ ও অবৈধ গর্ভপাতের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও এলাকায় ব্যাপক প্রচার রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নিউ মডার্ণ ক্লিনিকের যেনো প্রতারণার ফাঁদ পেতে বাণিজ্য করছেন। রাজশাহীর তানোর সদরের বিদ্যুৎ অফিসের পশ্চিমে অবস্থিত নিউ মর্ডাণ ক্লিনিক। এই ক্লিনিকে এমন অনিয়ম-দুর্নীতির গোপন রহস্য ফাঁস করেছেন ওই ক্লিনিকের নার্স শিলা খাতুন। এর আগেও এই ক্লিনিকে সরকারি ওষুধ বিক্রির সত্যতা পাওয়া যায়। যার একটি ভিডিও ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ধামাচাপা পড়েছে এসব অভিযোগ।

সম্প্রতি ক্লিনিকের নারী নার্স শিলা খাতুনের বেতন আটকিয়ে জিম্মি করার ভিডিও সামাজিক ফেসবুকে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল অসামাজিক কার্যকলাপের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র মৃত্যু ফাঁদ বা মিনি পতিতালয় বললেও ভুল হবার নয়। সম্প্রতি ক্লিনিকের এক আয়ার সঙ্গে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমলীলা নিয়ে ইতমধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারিবিধি মোতাবেক প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল পরিচালনা করতে পরিবেশ ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস অনুমতিপত্র, পারমাণবিক শক্তি কমিশনের অনুমতিপত্র, আয়কর-ভ্যাট, ডিপ্লোমা নার্স ও প্যাথলজি ডিপ্লোমাধারী সার্বক্ষণিক এমবিবিএস চিকিৎসক অবশ্যই থাকতে হবে।

তাছাড়াও ১৯৮২ সালের ‘দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড লাবরেটরিজ রেগুলেশন’ অনুযায়ী ১০ শয্যাবিশিষ্ট কোন হাসপাতালের জন্য জরুরি বিভাগে তিনজন স্থায়ী চিকিৎসক কর্মকর্তা, তিনজন ডিপ্লোমাধারী জ্যেষ্ঠ সেবিকা, তিনজন কনিষ্ঠ সেবিকা, তিনজন আয়া, তিনজন ওয়ার্ডবয়, একজন ব্যবস্থাপক, দু’জন পাহাদার, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্ত্রপাচারকে (অপারেশন থিয়েটার) না থাকলে সেখানে কোনো রোগির অস্ত্রপাচার (অপারেশন) করানো যাবে না বলে শর্ত দেয়া রয়েছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণির অসাধু ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে নিউ মডার্ণ ক্লিনিক মালিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এব্যাপারে তানোরে অবস্থিত নিউ মডার্ণ ক্লিনিকের এমডি সাহাদাৎ হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিটি ক্লিনিকে কমবেশি কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ম্যানেজ করেই ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে। তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: বার্নাবাস হাঁসদাক বলেন, ওই ক্লিনিকে অপচিকিৎসার ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে, এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

তানোরে নিউ মডার্ণ ক্লিনিকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বাণিজ্যের অভিযোগ!

আপডেট সময় : ১১:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

রাজশাহীর তানোরে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা ‘নিউ মডার্ণ ক্লিনিকে’র বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও একশ্রেণির পল্লী চিকিৎসক রোগি ধরা দালাল হিসেবে কাজ করছে। রোগি প্রতি কমিশনের আশায় এসব দালালরা অভিনব কৌশল ও প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগি বাগিয়ে নিয়ে নিউ মডার্ণ ক্লিনিকে ভর্তি করছে।

তখন চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। অধিকাংশে মালিক-কর্মচারিরা চিকিৎসক সেজে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও এখানে নারী সঙ্গ উপভোগ ও অবৈধ গর্ভপাতের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও এলাকায় ব্যাপক প্রচার রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নিউ মডার্ণ ক্লিনিকের যেনো প্রতারণার ফাঁদ পেতে বাণিজ্য করছেন। রাজশাহীর তানোর সদরের বিদ্যুৎ অফিসের পশ্চিমে অবস্থিত নিউ মর্ডাণ ক্লিনিক। এই ক্লিনিকে এমন অনিয়ম-দুর্নীতির গোপন রহস্য ফাঁস করেছেন ওই ক্লিনিকের নার্স শিলা খাতুন। এর আগেও এই ক্লিনিকে সরকারি ওষুধ বিক্রির সত্যতা পাওয়া যায়। যার একটি ভিডিও ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ধামাচাপা পড়েছে এসব অভিযোগ।

সম্প্রতি ক্লিনিকের নারী নার্স শিলা খাতুনের বেতন আটকিয়ে জিম্মি করার ভিডিও সামাজিক ফেসবুকে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল অসামাজিক কার্যকলাপের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র মৃত্যু ফাঁদ বা মিনি পতিতালয় বললেও ভুল হবার নয়। সম্প্রতি ক্লিনিকের এক আয়ার সঙ্গে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমলীলা নিয়ে ইতমধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারিবিধি মোতাবেক প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল পরিচালনা করতে পরিবেশ ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস অনুমতিপত্র, পারমাণবিক শক্তি কমিশনের অনুমতিপত্র, আয়কর-ভ্যাট, ডিপ্লোমা নার্স ও প্যাথলজি ডিপ্লোমাধারী সার্বক্ষণিক এমবিবিএস চিকিৎসক অবশ্যই থাকতে হবে।

তাছাড়াও ১৯৮২ সালের ‘দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড লাবরেটরিজ রেগুলেশন’ অনুযায়ী ১০ শয্যাবিশিষ্ট কোন হাসপাতালের জন্য জরুরি বিভাগে তিনজন স্থায়ী চিকিৎসক কর্মকর্তা, তিনজন ডিপ্লোমাধারী জ্যেষ্ঠ সেবিকা, তিনজন কনিষ্ঠ সেবিকা, তিনজন আয়া, তিনজন ওয়ার্ডবয়, একজন ব্যবস্থাপক, দু’জন পাহাদার, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্ত্রপাচারকে (অপারেশন থিয়েটার) না থাকলে সেখানে কোনো রোগির অস্ত্রপাচার (অপারেশন) করানো যাবে না বলে শর্ত দেয়া রয়েছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণির অসাধু ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে নিউ মডার্ণ ক্লিনিক মালিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এব্যাপারে তানোরে অবস্থিত নিউ মডার্ণ ক্লিনিকের এমডি সাহাদাৎ হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিটি ক্লিনিকে কমবেশি কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ম্যানেজ করেই ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে। তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: বার্নাবাস হাঁসদাক বলেন, ওই ক্লিনিকে অপচিকিৎসার ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে, এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।