তানোরে অনুমোদনহীন কয়েক হাজার সেচ মটারে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ
- আপডেট সময় : ০৫:২৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৭০ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদনহীন কয়েক হাজার মটারে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ। এসব অনুমোদনহীন মটার বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায় ৪ হর্স পাওয়ারের এসব অবৈধ মটারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকুপ গুলোতে ঠিকমত পানি না উঠার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকার প্রভাবশালীরা পর্লী বিদ্যুত কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বাগান ও মুরগীর ফার্মের নামে মটারে সংযোগ নিয়ে সেচ প্রদান করছেন।এসব মটারের মালিকরা কৃষকদেরকে জিম্মি করে বিঘা প্রতি ৪হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন।
কৃষকরা বলছেন অবৈধ ভাবে মটার স্থাপন করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পর্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদেরকে লাখ টাকারও ঘুষ দিতে হয়। ওই টাকা মটার মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে তুলে নিচ্ছেন পানির সেচ মুল্যে বেশী নিয়ে।এ ঘটনায় আব্দুল বারিক নামে এক ভুক্তভোগী উপজেলা সেচ কমিটি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ ওই অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা গোপনে সেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। তানোর উপজেলা প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লায় আবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে শত শত মটার থেকে জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে।অপর দিকে তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার ৪হর্স মটারে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকুপ গুলো ঠিকমত পানি না উঠার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকার প্রভাবশালীরা পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধ ভাবে একেকজন ৪টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত মটার স্থাপন করে ব্যবসা করছেন।গত ৫ বছরে তানোরে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে প্রায় ২০ ফুট থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত। গভীর নলকুপের ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম ও ইন্সপেক্টর বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) ৮২ নম্বর প্রাণপুর মৌজার প্রাণপুর মাঠে এই ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা শুধু প্রাণ পুরেই নয়, এমন ঘটনা পুরো তানোর উপজেলার প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লার জমির মাঠে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তানোরের প্রাণপুর মাঠে আব্দুল বারিকের গভীর নলকূপ স্কীমের মাঝে সেচ কমিটির অনুমোদন ব্যতিত অবৈধভাবে মটর স্থাপন করা হয়েছে।প্রাণপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম মুকুল অবৈধ মটর স্থাপন করে তার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগমের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন। তানোর পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় কর্মকর্তা অবৈধ সুবিধা নিয়ে মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন বলে আলোচনা রয়েছে।সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বিগত ২০১৪ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করেন। পরিপত্রে বলা হয় বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট মোকাবিলায় সেচ মোটর স্থাপন নিরুৎসাহিত (বন্ধ) করে তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা সেচ কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অবৈধ সেচ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে।এবিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির এক সদস্য বলেন, যেখানে মটর বসানোর সুযোগ নাই, সেখানে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় কীভাবে? আবার সেই মটরে সেচ বাণিজ্য হয় কীভাবে?এবিষয়ে আমিনুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের পরামর্শে তারা মটর স্থাপন ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘সংযোগ নিতে ইতোমধ্যে ধাপে ধাপে তার প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’
এবিষয়ে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহাফুজুর রহমান বলেন, ‘গভীর নলকূপের কমান্ড এরিয়ায় সেচ মটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নাই, বিদ্যুৎ সংযোগের তো প্রশ্নই উঠেনা।’তিনি বলেন, ‘অবৈধ মটরগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পল্লী বিদ্যুৎকে বলা হয়েছে, তবে তারা আমাদের কথার গুরুত্ব দিচ্ছেন না বরং সংযোগ দেয়া অব্যাহত রয়েছে।’
এবিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ তানোরের ডিজিএম জহুরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তাদের মনে হয়েছে সংযোগ দেয়া প্রয়োজন, তাই দিয়েছেন। এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’তানোর পল্লী বিদ্যুতের ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায় না। ডিজিএম স্যারের নির্দেশে সংযোগ দেয়া হয়েছে।