ঢাকা ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে ফিরতে চায় তসলিমা নাসরিন

ড. ইউনূসকে পাঠানো খোলা চিঠিতে যা লিখলেন

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৫:০১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৯ বার পড়া হয়েছে

দেশে ফিরতে চেয়ে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তসলিমা জানান, এর আগে ড. ইউনূস তাকে দেশে ফিরে আসতে বলেছিলেন। তাই এবার তিনি দেশে ফিরতে তাকে খোলা চিঠি দিয়েছে।

গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) খোলা চিঠিতে তসলিমা লেখেন- আপনার কি মনে আছে আমাদের দেখা হয়েছিল, একবার বা দুবার, ইউরোপে? সম্ভবত ফ্রান্সের দোভিলে। উইমেন্স ফোরামের প্রোগ্রামে। সম্ভবত সাল ছিল ২০০৫। গালা ডিনারে অথবা লাঞ্চে এক টেবিলে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, যে টেবিলে বড় বড় লোক ছিলেন। চেরি ব্লেয়ার ছিলেন, সে কথা মনে আছে। আমি সম্ভবত কী-নোট স্পিকার ছিলাম সেবার।

আপনি খাবার টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ। আপনি বার বার বলছিলেন, ‘দেশে চলে আসুন, দেশে চলে আসুন’। আমি বলেছিলাম, ‘কী করে যাবো? আমাকে তো দেশের সরকার যেতে দেয় না দেশে’।

আপনি বলেছিলেন, ‘যেতে দেয় না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’। আমি দুঃখ করে বলেছি, ‘আমি তো দূতাবাসে গেলাম কতবার, আমাকে ভিসাও দেয় না, আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউও করে না’। আপনি বলেছিলেন, ‘রিনিউ করবে না, বললেই হলো? দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন তো!’

আমি বলেছিলাম, ‘আপনি তাহলে চেষ্টা করুন। সরকারকে বলুন। আপনি বললে নিশ্চয়ই হবে।’ আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনি চেষ্টা করবেন। আজ বহু বছর পর জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি আমাকে দেশে ফেরাবার চেষ্টা করেছিলেন? সরকারকে বলেছিলেন আমার সম্পর্কে কিছু? হয়ত তখন, যে কোনও কারণেই হোক কিছু করা আপনার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কিন্তু এখন তো আপনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধারণ করে আছেন। এখন কি আর আগের মতো বলবেন না, ‘কী এত বাইরে বাইরে থাকছেন, দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন’? আগের মতো কি বলবেন না ‘ও দেশ তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’? বলুন আবার আগের মতো। দেশে ফিরতে দিন। এখন তো আপনার হাতেই সব।

নাকি ভয় পাচ্ছেন? আপনাকে ঘিরে আছে যারা, তারা যে সবাই ইসলামী মৌলবাদী, তা তো আমার চেয়ে বেশি আপনি জানেন। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে সাহায্য করলে আপনার বিরুদ্ধে সরব হবে আপনার নতুন জিহাদি বন্ধুরা? শুধু আমার মুণ্ডুই নয়, আপনার মুণ্ডুও কেটে ফেলে রাখবে ঢাকার রাস্তায়?’

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের বিতর্কিত লেখার জন্য ধর্মীয় দলগুলোর আন্দোলনের কারণে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয় তসলিমা নাসরিন। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন তিনি। আপাতত ভারতের দিল্লিতে বসবাস করছেন তসলিমা। ২০০৪ সাল থেকে টানা তিন বছর পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দেশে ফিরতে চায় তসলিমা নাসরিন

ড. ইউনূসকে পাঠানো খোলা চিঠিতে যা লিখলেন

আপডেট সময় : ০৫:০১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশে ফিরতে চেয়ে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তসলিমা জানান, এর আগে ড. ইউনূস তাকে দেশে ফিরে আসতে বলেছিলেন। তাই এবার তিনি দেশে ফিরতে তাকে খোলা চিঠি দিয়েছে।

গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) খোলা চিঠিতে তসলিমা লেখেন- আপনার কি মনে আছে আমাদের দেখা হয়েছিল, একবার বা দুবার, ইউরোপে? সম্ভবত ফ্রান্সের দোভিলে। উইমেন্স ফোরামের প্রোগ্রামে। সম্ভবত সাল ছিল ২০০৫। গালা ডিনারে অথবা লাঞ্চে এক টেবিলে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, যে টেবিলে বড় বড় লোক ছিলেন। চেরি ব্লেয়ার ছিলেন, সে কথা মনে আছে। আমি সম্ভবত কী-নোট স্পিকার ছিলাম সেবার।

আপনি খাবার টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ। আপনি বার বার বলছিলেন, ‘দেশে চলে আসুন, দেশে চলে আসুন’। আমি বলেছিলাম, ‘কী করে যাবো? আমাকে তো দেশের সরকার যেতে দেয় না দেশে’।

আপনি বলেছিলেন, ‘যেতে দেয় না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’। আমি দুঃখ করে বলেছি, ‘আমি তো দূতাবাসে গেলাম কতবার, আমাকে ভিসাও দেয় না, আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউও করে না’। আপনি বলেছিলেন, ‘রিনিউ করবে না, বললেই হলো? দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন তো!’

আমি বলেছিলাম, ‘আপনি তাহলে চেষ্টা করুন। সরকারকে বলুন। আপনি বললে নিশ্চয়ই হবে।’ আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনি চেষ্টা করবেন। আজ বহু বছর পর জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি আমাকে দেশে ফেরাবার চেষ্টা করেছিলেন? সরকারকে বলেছিলেন আমার সম্পর্কে কিছু? হয়ত তখন, যে কোনও কারণেই হোক কিছু করা আপনার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কিন্তু এখন তো আপনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধারণ করে আছেন। এখন কি আর আগের মতো বলবেন না, ‘কী এত বাইরে বাইরে থাকছেন, দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন’? আগের মতো কি বলবেন না ‘ও দেশ তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’? বলুন আবার আগের মতো। দেশে ফিরতে দিন। এখন তো আপনার হাতেই সব।

নাকি ভয় পাচ্ছেন? আপনাকে ঘিরে আছে যারা, তারা যে সবাই ইসলামী মৌলবাদী, তা তো আমার চেয়ে বেশি আপনি জানেন। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে সাহায্য করলে আপনার বিরুদ্ধে সরব হবে আপনার নতুন জিহাদি বন্ধুরা? শুধু আমার মুণ্ডুই নয়, আপনার মুণ্ডুও কেটে ফেলে রাখবে ঢাকার রাস্তায়?’

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের বিতর্কিত লেখার জন্য ধর্মীয় দলগুলোর আন্দোলনের কারণে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয় তসলিমা নাসরিন। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন তিনি। আপাতত ভারতের দিল্লিতে বসবাস করছেন তসলিমা। ২০০৪ সাল থেকে টানা তিন বছর পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন তিনি।