ঢাকা ০৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০১:২২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ ১২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছেন এমন দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো সাময়িকভাবে বিজয়ী হতে পারে। কিন্তু দ্রুতই তারা এটা বুঝতে পারবে যে তাদের বক্তব্যের কোনো সারবত্তা নেই। সামাজিক মাধ্যমে টাকা ঢেলে বক্তব্য ছড়িয়ে বা নিউইয়র্কের গণপরিবহনব্যবস্থা ও ভ্যানে ব্যানার টানিয়ে কোনো কাজে আসবে না।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে শফিকুল আলম লিখেছেন, বাংলাদেশে যেসব ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কী ভাবছেন, তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শিগগিরই মুক্ত বিশ্বের নেতা হতে পারেন। তবে আমাদের কাজ হলো সবচেয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং যথাসম্ভব খোলামেলাভাবে সত্যটা তুলে ধরা।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি শফিকুল আলম। তবে নেত্র নিউজকে বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রদ্ধাপূর্ণ অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তারা একটি দারুণ সাংবাদিকতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে পরিচালিত কিছু মিথ্যা প্রচারণাকে তুলে ধরেছে।

শফিকুল আলম লিখেছেন, আমরা জানি, বিপ্লব (জুলাই গণ-অভ্যুত্থান) নিয়ে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সহিংসতা চালানোর বিষয়ে মিথ্যা বয়ান তৈরির ক্ষেত্রে এই গোষ্ঠীর ভাষ্যগুলো একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। আমরা এটা অস্বীকার করছি না যে কিছু ধর্মীয় সহিংসতা ঘটেনি। কিন্তু সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সেগুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে অতি রঞ্জন করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কীভাবে বিভিন্ন সংকট সামলে নিচ্ছেন, তা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন প্রেস সচিব। ড. ইউনূস কখনো হতবিহ্বল হয়ে পড়েন না উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, আগস্টের শুরুর দিনগুলোতে যখন থানাগুলোতে কোনো পুলিশ ছিল না এবং তরুণ-তরুণীরা পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা পালন করছিলেন, তখন আমি খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পুলিশ না থাকা মানে সরকারের উপস্থিতি দৃশ্যমান হয় না। প্রতিটা দিন একটি মাসের মতো মনে হতো। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস সব সময় শান্ত ছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ যেন দায়িত্বে ফেরে, সেই ব্যবস্থা করতে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে বলেন। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে বাংলাদেশের সমাজের মানুষের নাগরিক বোধ, শিষ্টাচার, মানবিকতা ও সবাই মিলে একসঙ্গে চলার মানসিকতাই বাকি সবকিছু ঠিক করে দেবে।

গত তিন মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধৈর্য ধরে শান্তভাবে সবকিছু সামলে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখেছেন বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমরা যখন সরকার হিসেবে ক্ষমতা অনুভব করতে শুরু করলাম, সে সময় রাজপথে গত দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র বিক্ষোভগুলোর কয়েকটি দেখা গেছে। তিনি সবচেয়ে আন্তরিক অভিপ্রায় নিয়ে এসব বিক্ষোভ সামলেছেন। একের পর এক বৈঠক এবং সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে প্রায় সব সময় সমাধান বেরিয়ে এসেছে। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যাগুলোর কয়েকটি, সবজি ও খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, আনসার বিক্ষোভ এবং পোশাক কারখানায় বিক্ষোভ একটির পর আরেকটি এসেছে। কিন্তু তিনি শান্ত থেকে ও নির্মোহভাবে এসব সংকট সামলেছেন, যা আমি অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে খুব কম দেখেছি।

শুরু থেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস সব বিদেশি সাংবাদিক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে আসার পক্ষে বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন শফিকুল আলম। তিনি লিখেছেন, তাদের নিজেদের মতো করে বাংলাদেশকে দেখতে ও বুঝতে দাও। কী কারণে আমরা আমাদের সমাজ, আমাদের জনগণ, আমাদের দেশ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তা তারা দেখুক।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে পোস্ট করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর হামলার কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। যারা উচ্ছৃঙ্খল জনতার দ্বারা হামলা ও লুটের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে।’

ট্রাম্প তার পোস্টে দাবি করেছেন যদি তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটত না।

তিনি অভিযোগ করেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বে হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আপডেট সময় : ০১:২২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছেন এমন দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো সাময়িকভাবে বিজয়ী হতে পারে। কিন্তু দ্রুতই তারা এটা বুঝতে পারবে যে তাদের বক্তব্যের কোনো সারবত্তা নেই। সামাজিক মাধ্যমে টাকা ঢেলে বক্তব্য ছড়িয়ে বা নিউইয়র্কের গণপরিবহনব্যবস্থা ও ভ্যানে ব্যানার টানিয়ে কোনো কাজে আসবে না।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে শফিকুল আলম লিখেছেন, বাংলাদেশে যেসব ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কী ভাবছেন, তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শিগগিরই মুক্ত বিশ্বের নেতা হতে পারেন। তবে আমাদের কাজ হলো সবচেয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং যথাসম্ভব খোলামেলাভাবে সত্যটা তুলে ধরা।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি শফিকুল আলম। তবে নেত্র নিউজকে বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রদ্ধাপূর্ণ অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তারা একটি দারুণ সাংবাদিকতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে পরিচালিত কিছু মিথ্যা প্রচারণাকে তুলে ধরেছে।

শফিকুল আলম লিখেছেন, আমরা জানি, বিপ্লব (জুলাই গণ-অভ্যুত্থান) নিয়ে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সহিংসতা চালানোর বিষয়ে মিথ্যা বয়ান তৈরির ক্ষেত্রে এই গোষ্ঠীর ভাষ্যগুলো একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। আমরা এটা অস্বীকার করছি না যে কিছু ধর্মীয় সহিংসতা ঘটেনি। কিন্তু সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং সেগুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে অতি রঞ্জন করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কীভাবে বিভিন্ন সংকট সামলে নিচ্ছেন, তা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন প্রেস সচিব। ড. ইউনূস কখনো হতবিহ্বল হয়ে পড়েন না উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, আগস্টের শুরুর দিনগুলোতে যখন থানাগুলোতে কোনো পুলিশ ছিল না এবং তরুণ-তরুণীরা পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা পালন করছিলেন, তখন আমি খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পুলিশ না থাকা মানে সরকারের উপস্থিতি দৃশ্যমান হয় না। প্রতিটা দিন একটি মাসের মতো মনে হতো। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস সব সময় শান্ত ছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ যেন দায়িত্বে ফেরে, সেই ব্যবস্থা করতে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে বলেন। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে বাংলাদেশের সমাজের মানুষের নাগরিক বোধ, শিষ্টাচার, মানবিকতা ও সবাই মিলে একসঙ্গে চলার মানসিকতাই বাকি সবকিছু ঠিক করে দেবে।

গত তিন মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধৈর্য ধরে শান্তভাবে সবকিছু সামলে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখেছেন বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমরা যখন সরকার হিসেবে ক্ষমতা অনুভব করতে শুরু করলাম, সে সময় রাজপথে গত দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র বিক্ষোভগুলোর কয়েকটি দেখা গেছে। তিনি সবচেয়ে আন্তরিক অভিপ্রায় নিয়ে এসব বিক্ষোভ সামলেছেন। একের পর এক বৈঠক এবং সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে প্রায় সব সময় সমাধান বেরিয়ে এসেছে। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যাগুলোর কয়েকটি, সবজি ও খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, আনসার বিক্ষোভ এবং পোশাক কারখানায় বিক্ষোভ একটির পর আরেকটি এসেছে। কিন্তু তিনি শান্ত থেকে ও নির্মোহভাবে এসব সংকট সামলেছেন, যা আমি অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে খুব কম দেখেছি।

শুরু থেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস সব বিদেশি সাংবাদিক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে আসার পক্ষে বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন শফিকুল আলম। তিনি লিখেছেন, তাদের নিজেদের মতো করে বাংলাদেশকে দেখতে ও বুঝতে দাও। কী কারণে আমরা আমাদের সমাজ, আমাদের জনগণ, আমাদের দেশ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তা তারা দেখুক।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে পোস্ট করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর হামলার কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। যারা উচ্ছৃঙ্খল জনতার দ্বারা হামলা ও লুটের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে।’

ট্রাম্প তার পোস্টে দাবি করেছেন যদি তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটত না।

তিনি অভিযোগ করেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বে হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন।