টানা বর্ষণে ঈশ্বরদীতে শত শত হেক্টর শিমের ক্ষেত পানির নিচে
- আপডেট সময় : ০৩:৩২:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০ বার পড়া হয়েছে
পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে মাঠজুড়ে চোখে পড়বে শিমের ক্ষেত। শিমের সবুজ লতা-পাতার মাঝে গোলাপি সাদা ফুল যে কারো নজর কাড়বে। এবার আগাম ‘রূপবান’ ও ‘অটো’ শিমে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু গত ১৩ সেপ্টেম্বর হতে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা বর্ষণে কৃষকের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শত শত হেক্টর শিমের ক্ষেত এখন পানির নিচে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ১,৬০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১,১৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ হয়েছে।
আগাম জাতের শিম বাজার উঠতে শুরু করেছে। শীতকালীন শিমসহ অন্যান্য কপি, গাজড়, মূলা সবজি চাষের জন্য চাষিরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঈশ্বরদীতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষীরা।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারি পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ৫৪১.১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ঈশ্বরদীতে।
সেপ্টেম্বরে ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখে যথাক্রমে ৪১, ৬৭.৫, ৬৫ এবং ৪৯.৬ মিলিমিটার অর্থাৎ চার দিনে মোট ২২৩.১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩৪৬.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখপাড়া গ্রামের শিমচাষি মনিরুল বলেন, তিন বিঘা জমির শিম গাছের গোড়া পুরোটাই এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তিন বিঘা জমি চাষ করতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
সবেমাত্র গাছে শিম আসা শুরু হয়েছে। ভালো দামে এক মণের মতো বিক্রি করেছি। এ অবস্থায় শিমতে নষ্ট হয়ে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো।
বাঘহাছলা গ্রামের শিম চাষি আব্দুর রহমান জানান, বেশিরভাগ কৃষি জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ করা হয়েছে। শিমের ফলন শুরু হয়েছে। হঠাৎ চারদিনের টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ শিমের জমি তলিয়ে গেছে।
বিশেষ করে শিম গাছের গোড়া পানির নিচে রয়েছে। তিন দিনের বেশী পানির নিচে থাকলে সাধারণত শিম গাছ মরে যায়।
বৃষ্টির পানি এখনো শিম ক্ষেত জমে আছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে অধিকাংশ শিম গাছ পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কৃষকরা এবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মুলাডুলির উপ-কৃষি কর্মকর্তা রোমানা পারভীন বলেন, এই ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের কৃষি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
এখানকার শিম ক্ষেতগুলো এখনো পানির নিচে। শুধু গোয়ালবাথান নয়, আশপাশের প্রতিটি গ্রামেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া কমলা নদী ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই।
বৃষ্টি হলেই এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে এখানকার শত শত হেক্টর জমির ফসল জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, মুলাডুলি ইউনিয়ন শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। এই ইউনিয়নে প্রায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে প্রতি বছর শিমের আবাদ হয়।
এবার আগাম জাতের শিমের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। প্রবল বর্ষণে শিমের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থাপনা না রাখায় জলাবদ্ধতার কারণে শিম ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সাধারণত তিন থেকে চার দিন শিম গাছের গোড়া পানির নিচে থাকলে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
গাছের গোড়া থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর দ্রুত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নানান পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।