চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ৬টি পদের ৪ টি পদ খালি
চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত চর অঞ্চলের সাধারন মানুষ

- আপডেট সময় : ১১:৪৫:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ ৩১ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ৯ নং চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয় পদ্মা নদীর ওপারে অবস্থীত। ইউনিয়নটিকে উপজেলা সদর ও জেলা সদর থেকে বিছিন্ন করে রেখেছে পদ্মা নদী। বিছিন্ন ইউনিয়ন হলেও এর আয়তন আয়তন ৩৬.৭৮ বর্গকিলোমিটার। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৭ হাজার ৩ শ’ ৩ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী কোন রোগী নিয়ে যেতে হলে নৌকায় পদ্মা নদী পার হয়ে যেতে হয়। যার ফলে রোগী হাসপাতালে নিয়ে য়েতে অনেক সময় লেগে যায়।
পদ্মা নদী ও চর এলাকার জন্য এ্যাম্বুলেন্স যোগে জরুরী ভিত্তিতে সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে না এ অঞ্চলের মানুষেরা। অনেক সময় সংকটাপন্ন রোগী জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে না পারায় রাস্তাতেই অনেক রোগীকে প্রান হারাতে হয় চিকিৎসার অভাবে।
তাই ইউনিয়নবাসীর চিকিৎসার স্থল চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র। এছাড়াও ২ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র থেকে ১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক ৫ কিলোমিটার দুরে চর ভুবন পাড়ায় ও অপর কমিউনিটি ক্লিনিক ১০ কিলো মিটার দুরে দিয়াড় মানিকচর এলাকায় অবস্থীত। বিছিন্ন চর এলাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটিতে মেডিক্যাল অফিসার ১ জন, এস.এস.সি.এমও ১জন, মেডিক্যাল ফার্মাসিট ১ জন, এফ ডাব্লু ভি ১জন, আয়া ১ জন নিরাপত্তা প্রহরী ১জন পদ মোট ৬ টি পদ থাকলেও ৪ টি পদে নেই কোন জনবল। খালি রয়েছে মেডিক্যাল অফিসার, এস.এস.সি. এমও, এফ ডাব্লু ভি ও আয়ার পদ। শুধু মাত্র ১ জন মেডিক্যাল ফার্মাসিট ও ১জন নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি। জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিছিন্ন চর এলাকার সহজ সরল সাধারন মানুষ গুলো।
চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ৬ টি পদের মধ্যে মেডিকেল অফিসারের মত গুরুত্বপূর্ণ পদসহ ৪ টি পদ বছরের পর বছর ধরে শুন্য থাকলেও টনক নড়ে না উর্ধতন কর্তৃপক্ষের। চর অঞ্চলবাসীর অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও তারা কোন প্রতিকার পাইনি।
প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর নেই মেডিক্যাল অফিসার, ২ বছর থেকে নেই এস.এস.সি.এমও, প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর নেই এফ ডাব্লু ভি ও ৬ বছর থেকে নেই আয়া। এই পদ গুলোতে যারা কর্মরত ছিল তারা অবসরে যাওয়ার পর থেকে পদ গুলো খালি রয়েছে। চর অঞ্চল বলে এখানে কেউ আসতে চাই না। দির্ঘ দিন থেকে পদ গুলো খালি থাকলেও চর অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পদ গুলোতে জনবল পুরনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নেইনি কোন পদক্ষেপ। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারনে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিছিন্ন চর এলাকার সহজ সরল সাধারন মানুষ। এমনকি জরুরী চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেককে হারাতে হচ্ছে প্রাণ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ভিতরে একজন বসে আছে। ২/১ জন করে রোগী আসলে রোগীদের মুখের কথা শুনে ওষুধ দিচ্ছে। রুমের ভিতরে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি একজন মেডিকেল ফার্মাসিট। নাম রুহুল আমিন। প্রতি দিন কয়জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গড়ে প্রতিদিন ৮০/৯০ জন রোগী আসে। তবে তিনি বলেন, মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ ওষুধ আসে। ১৫ থেকে ২৫ তারিখ বেশী রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসে।
কোন ধরনের রোগী বেশী আসে? তিনি জ্বও, সর্দি, কাশি বেশী আসে। জটিল রোগী আসে না ? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জটিল রোগী আসলে আমিতো চিকিৎসা দিতে পারি না। সাপে কাটা, গর্ভবতী বা জটিল রোগী আসলে সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, আমিতো ডাক্তার না। আমি ফার্মাসিট, রোগীর চিকিৎসা করতে পারি না। আমি রোগীকে ওষুধ দিতে পারি। এখানে ডাক্তার নাই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে যোগদান করার পর থেকে আমি কোন ডাক্তার দেখিনি। ডাক্তারের পদ শুন্য আছে। শুধু ডাক্তার না। ৬টি পদের মধ্যে মেডিক্যাল অফিসার, এস.এস.সি.এমও, এফ ডাব্লু ভি ও আয়া ৪ টি পদ শুন্য আছে। জনবল সংকটের কারনে চরম সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। তবে ফিল্ডে কাজ করে এফ পি আই ইউসুফ আলী মঝে মধ্যে এখানে এসে আমাকে সহযোগিতা করে।
কথা হয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা চর আষাঢ়িয়াদহ গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধা নবীয়ার সাথে। তিনি বলেন, কাশি ও হাটু ব্যাথার জন্য ওষুধ নিতে এসেছি। অভিযোগের শুরে বলেন, ঠিকমত ওষুধ পাই না। ২/৪ টা ট্যাবলেট ছাড়া কিছুই দেয় না।
আরেক রোগী চর নতুন গ্রামের জোহরা বেগমের (৬৫) বলেন, মাথার সমস্যার জন্য ওষুধ নিতে এসেছি। ওষুধ ঠিকমত পাই না। ২/৪ টি ওষুধ দেয়। আসলেই বলে ওষুধ নাই। এখানে যে ওষুধ আসে তা বাইওে বিক্রি করে দেয়। আমাদের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হয়। তিনি বলেন, এখানে জটিল রোগী বা গর্ভবতী রোগী আসলে চিকিৎসা পাই না। ডাক্তার নাই বলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
চর কানাপাড়া গ্রামের রোগী হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদেও চর অঞ্চলের একমাত্র হাসপাতাল এটাই। এখানে কোন রোগী চিকিৎসা পাই না, ওষূধ পাই না। গর্ভবতী রোগী, সাপে কাটা রোগী বা জরুরী রোগীকে পদ্মা নদীর ওইপার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। যোগাযোগ ব্যাবস্থা আমাদের ভালো না থাকায় এই সব রোগী নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। এমনকি চিকিৎসার অভাবে অনেককে প্রান হারাতে হয়।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা সাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মর্তা ডাঃ মোহাম্মদ হাসানুল জাহিদের সাথে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া না যাওয়ায় তার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।