অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ঘটেছে
গোদাগাড়ীতে টমেটোতে এবার আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা

- আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে
দেশের টমেটো অঙ্গরাজ্য হিসাবে খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। দেশের বেশিরভাগই টমেটো উৎপাদন হয় এই উপজেলায়। এজন্য “টমেটো অঙ্গরাজ্য” বলা হয় গোদাগাড়ীকে। তবে গত সাত বছরে টমেটো চাষে ‘নীরব বিপ্লব’ হলেও বাড়নি চাষের জমি। এ উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, বছরভেদে টমেটোর দাম বাড়া-কমায় অনেকেই টমেটো চাষ কম করছে। তবে পদ্মা নদীর ওই পার চরাঞ্চলের কৃষকরা দিন দিন টমেটো চাষের দিকে ঝুকছে। প্রতি বছর চরাঞ্চলে বাড়ছে টমেটোর চাষ। চরাঞ্চলের জমি পলিমাটি হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের চাইতে টমেটোর সাইজ বড় হচ্ছে এবং দাম বেশী পাচ্ছে এ অঞ্চলের টমেটো চাষিরা। গোদাগাড়ীতে এবার প্রায় বছরে আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। কেনা বেচায় অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ঘটেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গোদাগাড়ীতে টমেটোর আবাদ হয় ২ হাজার ৬শ” ৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৫৮ হাজার ৫শ” ৯৫ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ১শ” ৫০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৪৯ হাজার ৫শ” ২৫ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৪শ” ৬০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৫৯ হাজার ৪০ টন; ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২হাজার ৮শ” ৫০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৭১ হাজার ২শ” ৫০ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ১৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছিল ৮৭ হাজার ৪ শ” ৩৫ টন; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ২শ” ৪৫ হেক্টর; উৎপাদন হয়েছিল ৬৫ হাজার ১শ” ৫ টন এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬ শ”৭০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৭৬০ টন। এ বছর গড়ে ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি ধরা হলে আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এসব টমেটো চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আট হাজার কৃষক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি থেকেই বিক্রি হয় এসব টমেটো। উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় টমেটো চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে টমেমেটাতে আগ্রহ বাড়ছে। সাধারণত আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে টমেটোর চাষ শুরু হয়। গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৭-২০ জাতের টমেটোর চাষ হয়। যার মধ্যে বেশিরভাগই হাইব্রিড। তবে অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। তবে ভালো ফলন, বীজ ও দাম নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে কোনো বছর চাষের হার বেড়েছে আবার কোনো বছর কমেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের টমেটো চাষী সেলিম বলেন, ‘গোদাগাড়ীতে আগের মতো টমেটো চাষ হয় না। এখন যা হয় সব মাঠেই বিক্রি হয়ে যায়। আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে টমেটো কিনতো। এখন আর আগের মত বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকরি দেখা যায় না। তবে এখনো অনেক টমেটো চাষ হয়েছে এ উপজেলায়। ব্যবসায়ীরা জমিতে থেকেই টমেটো কিনে নিচ্ছে। লাভও হচ্ছে। সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে। এখন জমি থেকে টমেটো উত্তোলন করছিনা। টমেটোর দম নেই। জমি থেকে টমেটো তুলে শ্রমিকের মুজুরি হচ্ছে না। টমেটোর গাছ কেটে ফেলে জমিতে ধান চাষ করবো।’
কথা হয় টমেটো ব্যবসায়ী মুক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ভালো টমেটো আছে। ভালো দাম আছে। প্রতিদিন এক ট্রাক করে টমেটো ঢাকায় পাঠাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লায় যাচ্ছে এসব টমেটো। তবে এবার টমেটোর দাম মাঝে মধ্যে কম বেশী হওয়ায় লাভ হলেও লোকসানও হয়েছে। লাভ লোকসান মিলে তেমন লাভ হয়নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, এই অঞ্চলে দুবার টমেটোর চাষ হয়। এরমধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো রয়েছে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষিরা। এবছর এই টমেটো ১৫-১৬০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গড়ে ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি ধরা হলে আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, টমেটো বেচাকেনাকে কেন্দ্র অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।