ঢাকা ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুজবে সয়লাব অনলাইন-অফলাইন, নেপথ্যে কী?

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ১১:৫২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৭ বার পড়া হয়েছে
  • আগস্টে গুজব ছড়ানো হয়েছে ৩৭০টি
  • নতুন গুজব ‘২৬ সেপ্টেম্বর’
  • পুরনো পদ্ধতিতে ‘অবলম্বনের চেষ্টায়’ আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর প্রথমেই গুজব ছড়ানো হয় ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে জনতা’। অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে শহীদ মিনারে জমায়েতের পুরনো ভিডিওচিত্র। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা গুজব হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এরপর থেকে নানা অপপ্রচার ও গুজব দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ভাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও অনলাইন আওয়ামী লীগ নামে বেশ কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে গুজব ছড়াতে দেখা যায়।

গুজব ও অসত্য তথ্য যাচাইকারী সংশ্লিষ্ট পেজ ‘রিউমার স্ক্যানার’ বলছে, শুধু আগস্ট মাসেই ৩৭০টি গুজব যাচাই করেছেন তারা, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

অনলাইনে গুজব হিসেবে ছড়ানো হয়— প্রত্যেক পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে।

টুইটারে ‘বাবা বানারস’ নামে একটি একাউন্ট থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে পূজা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও দেশে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, এমনকি আলোচনাও হয়নি।

যমুনা টেলিভিশনের নাম ব্যবহার করে গুজব হিসেবে প্রচার করা হয়— বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তে সূরা ফাতিহা পাঠ করা হবে৷

গুজবের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামাজিক অবস্থান ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের। দুটি আপত্তিকর ছবিকে এডিট করে তাতে আসিফ মাহমুদের চেহারা বসানো হয়। এ নিয়ে শোরগোল সৃষ্টি হলে পরে জানা যায়, ছবি দুটি এডিট করা।

একইভাবে আরেক সমন্বয়ের সারজিস আলমের ছবি ব্যবহার করেও গুজব ছড়ানো হয়৷

Rumours_AL--1

সম্প্রতি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস পদত্যাগ করেছেন’— এমন গুজব ছড়ানো হয়। দুটি নকল পদত্যাগপত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়।

একই সময় নতুন গুজব ওঠে ‘২৬ সেপ্টেম্বর’। তবে সেদিন কি হবে, তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছেই।

নেটিজেনদের মতে, ২৮ অক্টোবরের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু নেট দুনিয়ায় নয়, ২৬ সেপ্টেম্বর নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে পাড়া-মহল্লায়, চায়ের দোকানে।

কী হচ্ছে ২৬ তারিখ— এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অনেকেই৷ মমিনুল ইসলাম নামে একজন ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, যেখানে যাচ্ছি সেখানেই শুনতেছি ২৬ তারিখ৷ কী হবে? কিছুই তো দেখি না। এগুলো আসলে প্যানিক ছড়ানো। মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।

২৬ সেপ্টেম্বর কোনো বিশেষ দিন, এমনকি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্ববহ কোনো তারিখও নয়। দেশের ইতিহাসে ২৬ সেপ্টেম্বর বড় কিছু ঘটার নজিরও নেই।

এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ সেপ্টেম্বর দলটির কোনো কর্মসূচিও নেই। অর্থাৎ এই খবরটিও গুজব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারাই তো নাই। কর্মীদের সঙ্গে নেতাদের ওইভাবে যোগাযোগ নাই। কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে। এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি নেই, এটা নিশ্চিত।

তবে এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ করলে তাদের অনেকে জানান, ২৬ সেপ্টেম্বরকে আলোচনায় এনে কিছু কর্মী মাঠে নামাতে চায় আওয়ামী লীগ। এতে বিরোধীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু সংঘর্ষ হতে পারে৷ আর সেই সংঘর্ষকে হামলা হিসেবে দেখিয়ে রাজনীতির মাঠে আওয়াজ তুলতে চায় আওয়ামী লীগ।

Rumours_AL--2

জানা গেছে, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি জোট সরকারের শাসন আমলে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে নিজেদের নারী নেত্রীদের মাঠে নামিয়েছিল আওয়ামী লীগ৷ হামলার সম্ভবনা প্রবল জেনেও নারী নেত্রীদের রাজপথে নামানো হয়৷ এতে আহত হন অনেক নেত্রী৷ আর সেই হতাহতের ছবি জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরা হয়। এরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ৷

অনেক সাধারণ নাগরিকের ধারণা, সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ দেশে জনমত তৈরি করতে পারছে না। তাই কিছুটা গুজব নির্ভর হয়ে উঠছে৷ একই সঙ্গে পুরনো কায়দায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে তা যদি সংঘর্ষে রূপ নেয় তাহলে সংষর্ষের সেসব তথ্য জাতিসংঘে উপস্থাপন করে বিশ্বে নিজেদের নিপীড়িত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় আওয়ামী লীগ৷

সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ থেকে জানানো হয়েছে, দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়ার হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরতে চান তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গুজবে সয়লাব অনলাইন-অফলাইন, নেপথ্যে কী?

আপডেট সময় : ১১:৫২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • আগস্টে গুজব ছড়ানো হয়েছে ৩৭০টি
  • নতুন গুজব ‘২৬ সেপ্টেম্বর’
  • পুরনো পদ্ধতিতে ‘অবলম্বনের চেষ্টায়’ আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর প্রথমেই গুজব ছড়ানো হয় ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে জনতা’। অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে শহীদ মিনারে জমায়েতের পুরনো ভিডিওচিত্র। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা গুজব হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এরপর থেকে নানা অপপ্রচার ও গুজব দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ভাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও অনলাইন আওয়ামী লীগ নামে বেশ কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে গুজব ছড়াতে দেখা যায়।

গুজব ও অসত্য তথ্য যাচাইকারী সংশ্লিষ্ট পেজ ‘রিউমার স্ক্যানার’ বলছে, শুধু আগস্ট মাসেই ৩৭০টি গুজব যাচাই করেছেন তারা, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

অনলাইনে গুজব হিসেবে ছড়ানো হয়— প্রত্যেক পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে।

টুইটারে ‘বাবা বানারস’ নামে একটি একাউন্ট থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে পূজা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও দেশে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, এমনকি আলোচনাও হয়নি।

যমুনা টেলিভিশনের নাম ব্যবহার করে গুজব হিসেবে প্রচার করা হয়— বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তে সূরা ফাতিহা পাঠ করা হবে৷

গুজবের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামাজিক অবস্থান ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের। দুটি আপত্তিকর ছবিকে এডিট করে তাতে আসিফ মাহমুদের চেহারা বসানো হয়। এ নিয়ে শোরগোল সৃষ্টি হলে পরে জানা যায়, ছবি দুটি এডিট করা।

একইভাবে আরেক সমন্বয়ের সারজিস আলমের ছবি ব্যবহার করেও গুজব ছড়ানো হয়৷

Rumours_AL--1

সম্প্রতি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস পদত্যাগ করেছেন’— এমন গুজব ছড়ানো হয়। দুটি নকল পদত্যাগপত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়।

একই সময় নতুন গুজব ওঠে ‘২৬ সেপ্টেম্বর’। তবে সেদিন কি হবে, তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছেই।

নেটিজেনদের মতে, ২৮ অক্টোবরের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু নেট দুনিয়ায় নয়, ২৬ সেপ্টেম্বর নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে পাড়া-মহল্লায়, চায়ের দোকানে।

কী হচ্ছে ২৬ তারিখ— এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অনেকেই৷ মমিনুল ইসলাম নামে একজন ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, যেখানে যাচ্ছি সেখানেই শুনতেছি ২৬ তারিখ৷ কী হবে? কিছুই তো দেখি না। এগুলো আসলে প্যানিক ছড়ানো। মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।

২৬ সেপ্টেম্বর কোনো বিশেষ দিন, এমনকি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্ববহ কোনো তারিখও নয়। দেশের ইতিহাসে ২৬ সেপ্টেম্বর বড় কিছু ঘটার নজিরও নেই।

এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ সেপ্টেম্বর দলটির কোনো কর্মসূচিও নেই। অর্থাৎ এই খবরটিও গুজব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারাই তো নাই। কর্মীদের সঙ্গে নেতাদের ওইভাবে যোগাযোগ নাই। কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে। এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি নেই, এটা নিশ্চিত।

তবে এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ করলে তাদের অনেকে জানান, ২৬ সেপ্টেম্বরকে আলোচনায় এনে কিছু কর্মী মাঠে নামাতে চায় আওয়ামী লীগ। এতে বিরোধীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু সংঘর্ষ হতে পারে৷ আর সেই সংঘর্ষকে হামলা হিসেবে দেখিয়ে রাজনীতির মাঠে আওয়াজ তুলতে চায় আওয়ামী লীগ।

Rumours_AL--2

জানা গেছে, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি জোট সরকারের শাসন আমলে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে নিজেদের নারী নেত্রীদের মাঠে নামিয়েছিল আওয়ামী লীগ৷ হামলার সম্ভবনা প্রবল জেনেও নারী নেত্রীদের রাজপথে নামানো হয়৷ এতে আহত হন অনেক নেত্রী৷ আর সেই হতাহতের ছবি জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরা হয়। এরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত ধরে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ৷

অনেক সাধারণ নাগরিকের ধারণা, সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ দেশে জনমত তৈরি করতে পারছে না। তাই কিছুটা গুজব নির্ভর হয়ে উঠছে৷ একই সঙ্গে পুরনো কায়দায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে তা যদি সংঘর্ষে রূপ নেয় তাহলে সংষর্ষের সেসব তথ্য জাতিসংঘে উপস্থাপন করে বিশ্বে নিজেদের নিপীড়িত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় আওয়ামী লীগ৷

সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ থেকে জানানো হয়েছে, দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়ার হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরতে চান তারা।