গণঅভ্যুত্থানের পরে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ

- আপডেট সময় : ১১:৫২:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
গত বছর ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কতিপয় কুচক্রী মহলের তৎপরতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে, সরকারি দফতর, থানাসমূহে হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আক্রমণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতিসহ বিবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এ ধরনের সংবেদনশীল ও অরাজক পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকগণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। এসময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রাণরক্ষায় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ মোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়।
এমতাবস্থায়, ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিকগণ আশ্রয় প্রার্থনা করেন। উদ্ভূত আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করার চেয়ে তাদের জীবন রক্ষা করা প্রাধান্য পেয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে, ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার-পরিজন (স্ত্রী ও শিশু) সহ সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেসময় শুধুমাত্র মানবিক কারণে এবং আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর, বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থী ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। এর মধ্যে ৫ জনকে তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়।
এছাড়া, গত ১৮ আগস্ট আইএসপিআর কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেনাবাহিনী এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে এবং ১৯৩ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে, যার মধ্যে ৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য বাদে ১৯৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। সেনাবাহিনী বলছে, এসব ব্যক্তির জীবন রক্ষার জন্য সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল এবং এটি একটি সম্পূর্ণ মানবিক পদক্ষেপ ছিল।
এদিকে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব প্রচারণার উদ্দেশ্য হলো জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করা। সেনাবাহিনী এই ধরনের অপপ্রচারে ক্ষুব্ধ এবং জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা এবং আস্থার সঙ্গে জাতির পাশে থাকবে।
সেনাবাহিনী এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে ৬২৬ জন আশ্রয়প্রার্থীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে, যাতে তাদের সঠিক পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে, বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার থেকে দূরে থাকতে এবং প্রকৃত তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকতে।
এমন পরিস্থিতিতে, সেনাবাহিনী এই ঘটনাকে একটি মানবিক ত্যাগ হিসেবে তুলে ধরে দেশের সার্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।