কোরআন ছুঁয়ে শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারা কী
- আপডেট সময় : ০৫:৪৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০২৩ ৯৮ বার পড়া হয়েছে
শপথ বা প্রতিজ্ঞা শুধুমাত্র আল্লাহর নামেই করা জায়েজ। কোরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তাই এর শপথ করলে সেটি হবে গাইরুল্লাহর নামে শপথ। যা জায়েজ নেই। কোরআন ছুঁয়ে শপথকারী গুনাহগার হবে। এক হাদিসে নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে গাইরুল্লাহর নামে কসম করল সে কুফরি ও শিরক করল।’ (তিরমিজি: ১৫৩৫)
তবে, আমাদের সমাজে যেহেতু কোরআন ছুঁয়ে বা কোরআনের শপথকে কসম হিসেবে গণ্য করা হয়, তাই কেউ কোরআন ছুঁয়ে শপথ করলে এর দ্বারা কসম হয়েছে বলেই সাব্যস্ত হবে। এ বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, যদি কেউ কোরআনের কসম খায়, তাহলে সেটা কসম বলে বিবেচিত হবে। যদি এইভাবে বলে যে কোরআনের কসম, কালামুল্লাহর কসম অথবা কোরআনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলল, এই কোরআনে যে আল্লাহর কালাম আছে তার কসম, তাহলে কসম হবে। (আহসানুল ফতোয়া: ৫/৪৮৮)
ফলে কোরআনের শপথ করার পর এর বিপরীত কাজ করলে কসমের কাফফারা আদায় করা আবশ্যক হবে। কসম ভঙ্গের আগে কাফফারা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। বরং কসম ভঙ্গ করার পরই কাফফারা আদায় করতে হবে। কাফফারার দুই পদ্ধতি: এক. ১০ মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে খানা খাওয়ানো। দুই. ১০ মিসকিনকে ১০ সেট পোশাক প্রদান করা। এ দুটির যেকোনোটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। এর কোনোটিতেই সক্ষম না হলে ধারাবাহিক তিনটি রোজা রেখেও কাফফারা আদায় করার সুযোগ আছে। (সুরা মায়েদা: ৮৯, দুররুল মুখতার: ৩/৭২৫)
অর্থাৎ কেউ কোরআনের শপথ করলে সেটি কসম সাব্যস্ত হওয়ার কারণে তা ভঙ্গ করলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে সাধারণ নিয়মে কসম ভাঙ্গারই কাফফারা দিতে হবে।
জেনে রাখা জরুরি, কেউ গুনাহে লিপ্ত হওয়ার শপথ করলে তা ভেঙে ফেলতে হবে এবং কাফফারাও দিতে হবে। একইসঙ্গে তাওবা ইস্তেগফারও করতে হবে। যেমন—কেউ ব্যভিচার করা বা খুন করা বা শরাব পান করার শপথ করল। তাহলে তার শপথ ভেঙে কাফফারা দিতে হবে এবং তাওবা ইস্তেগফার করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৩/১৭)
উল্লেখ্য, কিছু কসমের কাফফারা নেই। যেমন অতীত বা বর্তমান কোনো বিষয়ে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা কসম খাওয়া। শরিয়তের পরিভাষায় এই কসমের নাম ‘গামুস’। এটি কবিরা গুনাহ। এজাতীয় কসমের কোনো কাফফারা নেই। এর পাপ থেকে নিষ্কৃতির একমাত্র উপায় আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইস্তেগফার করা। ‘লাগব’ নামেরও এক প্রকার কসম আছে। অতীত বা বর্তমানকালের কোনো বিষয়ে সত্য মনে করে কসম করা যা বাস্তবে তার ধারণামাফিক নয়। এই ধরনের কসমের ক্ষেত্রে আশা করা যায় যে আল্লাহ তাআলা পাকড়াও করবেন না। (বাদায়েউস সানায়ে: ৩/১৭)
মূলত যে কসম ভঙ্গ করলে কাফফারা জরুরি হয় সেটি হলো মুনআকিদাহ তথা ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা বা না করার ব্যাপারে কসম। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্থহীন কসমের জন্য তোমাদের দায়ী করবেন না। কিন্তু যেসব কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে করো, সেসবের জন্য তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন…।’ (সুরা মায়েদা: ৮৯)