ঢাকা ০৯:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদে বগুড়ায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার লাচ্ছা সেমাই বিক্রির সম্ভাবনা

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৫:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ৮৬ বার পড়া হয়েছে

ঈদুল ফিতর আসতে আর কয়েকদিন বাঁকি। ঈদের আনন্দের সাথে রসনাবিলাশ হিসেবে খাদ্য তালিকায় প্রথমে থাকে লাচ্চা-সেমাই। তাইতো এসব সেমাই তৈরির ব্যস্ত রয়েছে মালিক-কারিগররা। বগুড়া জেলায় ছোট-বড় ২০০ কারখানায় তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। এ জেলার তৈরি এসব সেমাই উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ সমাদৃত হয়ে বাজার দখল করেছে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্যাকেটে বগুড়া থেকে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে সারাদেশে নিজ ব্র্যান্ডিংয়ে বিক্রি করে আসছে।

ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন হবে প্রায় ২০ হাজার টন (নরমাল ও ঘি ভাজা মিলে) লাচ্ছা সেমাই। যার বাজারমূল্য সাড়ে ৩শ কোটি টাকা বিক্রি ছাড়িয়ে যাবে বলে এমনটাই সম্ভাবনা ও আশার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার তৈরি সাদা চিকন সেমাইয়ের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। সেমাই তৈরির জন্য জেলার আশপাশে বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে সেমাই গ্রাম। এখন সাদা সেমাইয়ের পাশাপাশি লাচ্ছা সেমাইও পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে। আধুনিক মেশিনে মানসম্মত উপায়ে তৈরি হয় এসব লাচ্ছা সেমাই। তবে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী শ্রমিক দিয়ে ম্যানুয়ালি লাচ্ছা সেমাই তৈরি করেন।

এবার কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। তারা চাহিদামতো লাচ্ছা সেমাই তৈরি ও সরবরাহ করতে পারছেন না। অন্য বছরের তুলনায় এবার মানভেদে দামও কিছুটা বেশি। ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা রাখতে তারা বাধ্য হয়েছেন দাম বাড়াতে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি উত্তরবঙ্গ পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় ব্র্যান্ড (প্যাকেটজাত সেমাই) ও নন-ব্র্যান্ড (খোলা সেমাই) মিলে রমজানে দুই শতাধিক কারখানা বিভিন্ন ধরনের লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে। এসব কারখানায় জেলার প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মরত। বগুড়ায় তৈরি লাচ্ছা সেমাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।

গত বছর নন-ব্র্যান্ডের খোলা লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছিল। এবার সেই লাচ্ছার মূল্য ধরা হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা। ব্র্যান্ডের বক্স লাচ্ছা ২০০-২৪০ টাকার জায়গায় এবার পাইকারি বিক্রি হবে ২৮০-৩০০ টাকায়। গত বছর ঘিয়ে ভাজা যে লাচ্ছা মানভেদে ৪০০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই একই লাচ্ছা ৮০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাচ্ছা সেমাই তৈরি কাঁচামাল হিসেবে অপরিহার্য সব উপাদানের দাম বেড়েছে। আগের বছর পাম অয়েলের দাম ছিল প্রতি ড্রাম ১৭ হাজার টাকা। এখন সেই পাম অয়েলের ড্রাম ব্যবসায়ীদের কিনতে হচ্ছে ৩০ হাজার টাকায়। ডালডার অবস্থাও ঠিক একই। লাচ্ছা তৈরিতে ডালডা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। গত বছর ডালডার ১৬ কেজির প্রতিটি কার্টনের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা। দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতি কার্টনের দাম হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

আটার মূল্যবৃদ্ধিও থেমে নেই। গত বছর ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা ময়দার দাম ছিল দুই হাজার টাকা। সেই ময়দার বস্তার এবার ব্যবসায়ীদের কিনতে হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি ময়দার দাম বেড়েছে ১ হাজার থেকে-১১’শ টাকা।

বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারির দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি উত্তরবঙ্গ পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও খাজা কনফেকশনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বায়েজিদ শেখ বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারসহ সবখানেই দাম বাড়ছে। কাঁচামাল কিনতে গিয়েও আমাদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদিও আটার জন্য গম আসে কানাডা থেকে। তবু বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। এসব কারণে এবার লাচ্ছা সেমাইয়ের দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেমাই বিক্রি করতে হবে ব্যবসায়ীদের।

বগুড়ার প্রসিদ্ধ রাজা লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক রাজা জানান, লাচ্ছা সেমাইয়ের প্রসার ঘটে চল্লিশের দশকে। শুরুর দিকে কলকাতা ও হুগলি থেকে এনে বিক্রি করা হতো। ষাটের দশকে বগুড়ার চিকন ও লাচ্ছা সেমাইয়ের সুনাম দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আশির দশকের পর বৈচিত্র্যময় স্বাদ ও মানের লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে খ্যাতি ছড়ায় আকবরিয়া হোটেল ও এশিয়া সুইটস।

বগুড়া শহর ও শহরতলি ছাড়াও শেরপুর, শাহজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে চিকন সেমাই কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে সেমাই ও লাচ্ছা।

সরেজমিন দেখা গেছে, যেসব কারখানায় সেমাই তৈরি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পরিবেশে। সেমাই তৈরির আগে তৈরি করা হয় ময়দার খামির বা ম-। ঈদে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত বাজারজাত করতে খামির তৈরি হচ্ছে মেশিন দিয়ে। খামির মেশিনে ফেলে তৈরি করা হচ্ছে চিকন ও লাচ্ছা সেমাই। তৈরি সেমাই শুকানো হচ্ছে উন্মুক্ত উঠানে।

শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের কয়েকজন কারখানার মালিক জানান, চিকন সেমাই ও লাচ্ছা তৈরির উপকরণ ময়দা, ডালডা ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প পুঁজির ছোট কারখানার বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। আগের মতো আর সেমাই তৈরি হচ্ছে না। চিকন সেমাই ও লাচ্ছা সেমাইয়ের দামও গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

শেরপুর উপজেলার নাহিদ এন্ড নাঈম ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এখন সব লাইসেন্সধারী লাচ্ছা-সেমাই তৈরীকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেই মেশিনের সাহায্যে কাজ করা হচ্ছে। এতে সময় কম লাগার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ছে। এসব পণ্য তৈরীতে প্রয়োজনীয় কাচামালের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় মহাজনরা নগদ অর্থ ছাড়া মাল সরবরাহ করছেনা,সেক্ষেত্রে আমাদের অল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এদিকে লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে শ্রমিকরা বস্তাপ্রতি পারিশ্রমিক নেন। এক বস্তা লাচ্ছা সেমাই কাজের জন্য শ্রমিকেরা গত বছর খরচ নিয়েছিলেন ৪৫০ টাকা। ১০০ টাকা বেড়ে এবার ৫৫০-৬৫০ টাকায় শ্রমিক খরচ দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রং মিশিয়ে ভেজাল তেল দিয়ে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে অবাধে বিক্রি করছেন। পরিত্যক্ত কক্ষ বা ভাড়া করা ঘরে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। লাচ্ছা সেমাই তৈরির অনেক দোকানের লাইসেন্স নেই। অনেকে আবার নিম্নমানের আটা ব্যবহার করছেন। এসব দোকানের মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঈদ পর্যন্ত লাচ্ছা সেমাই তৈরির কাজ চলবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, ঈদকে সামনে নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাচ্ছা সেমাই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে জব্দ ও ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ঈদে বগুড়ায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার লাচ্ছা সেমাই বিক্রির সম্ভাবনা

আপডেট সময় : ০৫:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

ঈদুল ফিতর আসতে আর কয়েকদিন বাঁকি। ঈদের আনন্দের সাথে রসনাবিলাশ হিসেবে খাদ্য তালিকায় প্রথমে থাকে লাচ্চা-সেমাই। তাইতো এসব সেমাই তৈরির ব্যস্ত রয়েছে মালিক-কারিগররা। বগুড়া জেলায় ছোট-বড় ২০০ কারখানায় তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। এ জেলার তৈরি এসব সেমাই উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ সমাদৃত হয়ে বাজার দখল করেছে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্যাকেটে বগুড়া থেকে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে সারাদেশে নিজ ব্র্যান্ডিংয়ে বিক্রি করে আসছে।

ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন হবে প্রায় ২০ হাজার টন (নরমাল ও ঘি ভাজা মিলে) লাচ্ছা সেমাই। যার বাজারমূল্য সাড়ে ৩শ কোটি টাকা বিক্রি ছাড়িয়ে যাবে বলে এমনটাই সম্ভাবনা ও আশার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার তৈরি সাদা চিকন সেমাইয়ের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। সেমাই তৈরির জন্য জেলার আশপাশে বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে সেমাই গ্রাম। এখন সাদা সেমাইয়ের পাশাপাশি লাচ্ছা সেমাইও পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে। আধুনিক মেশিনে মানসম্মত উপায়ে তৈরি হয় এসব লাচ্ছা সেমাই। তবে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী শ্রমিক দিয়ে ম্যানুয়ালি লাচ্ছা সেমাই তৈরি করেন।

এবার কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। তারা চাহিদামতো লাচ্ছা সেমাই তৈরি ও সরবরাহ করতে পারছেন না। অন্য বছরের তুলনায় এবার মানভেদে দামও কিছুটা বেশি। ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা রাখতে তারা বাধ্য হয়েছেন দাম বাড়াতে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বগুড়ার বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি উত্তরবঙ্গ পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় ব্র্যান্ড (প্যাকেটজাত সেমাই) ও নন-ব্র্যান্ড (খোলা সেমাই) মিলে রমজানে দুই শতাধিক কারখানা বিভিন্ন ধরনের লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে। এসব কারখানায় জেলার প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মরত। বগুড়ায় তৈরি লাচ্ছা সেমাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।

গত বছর নন-ব্র্যান্ডের খোলা লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছিল। এবার সেই লাচ্ছার মূল্য ধরা হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা। ব্র্যান্ডের বক্স লাচ্ছা ২০০-২৪০ টাকার জায়গায় এবার পাইকারি বিক্রি হবে ২৮০-৩০০ টাকায়। গত বছর ঘিয়ে ভাজা যে লাচ্ছা মানভেদে ৪০০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই একই লাচ্ছা ৮০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাচ্ছা সেমাই তৈরি কাঁচামাল হিসেবে অপরিহার্য সব উপাদানের দাম বেড়েছে। আগের বছর পাম অয়েলের দাম ছিল প্রতি ড্রাম ১৭ হাজার টাকা। এখন সেই পাম অয়েলের ড্রাম ব্যবসায়ীদের কিনতে হচ্ছে ৩০ হাজার টাকায়। ডালডার অবস্থাও ঠিক একই। লাচ্ছা তৈরিতে ডালডা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। গত বছর ডালডার ১৬ কেজির প্রতিটি কার্টনের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা। দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতি কার্টনের দাম হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

আটার মূল্যবৃদ্ধিও থেমে নেই। গত বছর ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা ময়দার দাম ছিল দুই হাজার টাকা। সেই ময়দার বস্তার এবার ব্যবসায়ীদের কিনতে হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি ময়দার দাম বেড়েছে ১ হাজার থেকে-১১’শ টাকা।

বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারির দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি উত্তরবঙ্গ পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও খাজা কনফেকশনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বায়েজিদ শেখ বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারসহ সবখানেই দাম বাড়ছে। কাঁচামাল কিনতে গিয়েও আমাদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদিও আটার জন্য গম আসে কানাডা থেকে। তবু বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। এসব কারণে এবার লাচ্ছা সেমাইয়ের দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেমাই বিক্রি করতে হবে ব্যবসায়ীদের।

বগুড়ার প্রসিদ্ধ রাজা লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিক রাজা জানান, লাচ্ছা সেমাইয়ের প্রসার ঘটে চল্লিশের দশকে। শুরুর দিকে কলকাতা ও হুগলি থেকে এনে বিক্রি করা হতো। ষাটের দশকে বগুড়ার চিকন ও লাচ্ছা সেমাইয়ের সুনাম দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আশির দশকের পর বৈচিত্র্যময় স্বাদ ও মানের লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে খ্যাতি ছড়ায় আকবরিয়া হোটেল ও এশিয়া সুইটস।

বগুড়া শহর ও শহরতলি ছাড়াও শেরপুর, শাহজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে চিকন সেমাই কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে সেমাই ও লাচ্ছা।

সরেজমিন দেখা গেছে, যেসব কারখানায় সেমাই তৈরি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পরিবেশে। সেমাই তৈরির আগে তৈরি করা হয় ময়দার খামির বা ম-। ঈদে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত বাজারজাত করতে খামির তৈরি হচ্ছে মেশিন দিয়ে। খামির মেশিনে ফেলে তৈরি করা হচ্ছে চিকন ও লাচ্ছা সেমাই। তৈরি সেমাই শুকানো হচ্ছে উন্মুক্ত উঠানে।

শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের কয়েকজন কারখানার মালিক জানান, চিকন সেমাই ও লাচ্ছা তৈরির উপকরণ ময়দা, ডালডা ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প পুঁজির ছোট কারখানার বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। আগের মতো আর সেমাই তৈরি হচ্ছে না। চিকন সেমাই ও লাচ্ছা সেমাইয়ের দামও গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

শেরপুর উপজেলার নাহিদ এন্ড নাঈম ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এখন সব লাইসেন্সধারী লাচ্ছা-সেমাই তৈরীকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেই মেশিনের সাহায্যে কাজ করা হচ্ছে। এতে সময় কম লাগার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ছে। এসব পণ্য তৈরীতে প্রয়োজনীয় কাচামালের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় মহাজনরা নগদ অর্থ ছাড়া মাল সরবরাহ করছেনা,সেক্ষেত্রে আমাদের অল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এদিকে লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে শ্রমিকরা বস্তাপ্রতি পারিশ্রমিক নেন। এক বস্তা লাচ্ছা সেমাই কাজের জন্য শ্রমিকেরা গত বছর খরচ নিয়েছিলেন ৪৫০ টাকা। ১০০ টাকা বেড়ে এবার ৫৫০-৬৫০ টাকায় শ্রমিক খরচ দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রং মিশিয়ে ভেজাল তেল দিয়ে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে অবাধে বিক্রি করছেন। পরিত্যক্ত কক্ষ বা ভাড়া করা ঘরে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। লাচ্ছা সেমাই তৈরির অনেক দোকানের লাইসেন্স নেই। অনেকে আবার নিম্নমানের আটা ব্যবহার করছেন। এসব দোকানের মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঈদ পর্যন্ত লাচ্ছা সেমাই তৈরির কাজ চলবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, ঈদকে সামনে নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাচ্ছা সেমাই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে জব্দ ও ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।