ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, উপকূলের জেলে মৎস্যজীবিদের মাঝে হতাশা ও উৎকন্ঠা
- আপডেট সময় : ০৪:৪৯:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশ রক্ষায় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অপরদিকে,সাগরে বার বার বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে এবার জেলেরা কাংখিত মাছ ধরতে পারেননি। নতুন করে মাছ ধরা বন্ধের ঘোষণায় উপকূলের জেলে মৎস্যজীবিদের মাঝে হতাশা ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে।
ভূক্তভোগী জেলেরা জানান, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে তারা সাতবার বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েছেন। উত্তাল সাগরে মাছ ধরতে না পেরে খালি বোট নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ফলে তারা বিপুল আর্থিক লোকসানে পড়েছেন ।
পিরোজপুরের পাড়েরহাটের মৎস্য আড়ৎদার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এবছর জেলে মৎস্যজীবিরা সাগরে তাদের কাংখিত মাছ ধরতে পারেননি। সাগরে গিয়েই জেলেরা ক্রমাগত দূর্যোগের কবলে পড়েছেন।
বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, উপকূলের জেলে মৎস্যৗজীবিরা ভালো নেই। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার জেলে মৎস্যজীবিরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছেন। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করে তিনি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা কমিয়ে এনে ভারতের সাথে মিল রেখে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।
শরণখোলার “এফবি মা বুশরা” ফিশিংবোটের মালিক বেলায়েত হোসেন ও “এফবি তানজিরা”এর মালিক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে তাদের ফিশিংবোট ৭ বার সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরতে না পারায় ৭ বারই তাদের লোকসান হয়েছে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় দেশীয় জেলেরা মাছ ধরতে না পারলেও পাশ্ববর্তী দেশের জেলেরা ঠিকই মাছ ধরে নিয়ে যায় বলে ঐ ফিশিংবোট মালিকরা জানান।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, সাগরে মাছ ধরতে ফিশিংবোট পাঠাতে একেকটি বোটের পিছনে কমপক্ষে তিন চার লাখ টাকা ব্যয় হয়। এবছর সাগরের আবহাওয়া সাত দফা খারাপ হওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে পারেনি ফলে বিপুল পরিমাণ লোকসানের মুখে জেলে মহাজনদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। প্রতি বছর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গিয়েই জেলেরা বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরে বর্তমানে আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার খবরে বেকার হওয়া জেলেদের মাঝে হতাশা ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে বলে আবুল হোসেন জানিয়েছেন।
শরণখোলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা, বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে জেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ডঃ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, জেলেদের স্বার্থে তাদের দাবী বাস্তবায়নে বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা পুনঃনির্ধারণ করে ভারতের সাথে মিল রেখে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।