ঢাকা ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আখ চাষ কম হওয়ায় জয়পুরহাট চিনিকলে উৎপাদন কমছে

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ১১:৩১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে

লাভজনক না হওয়ায় জয়পুরহাট চিনিকল জোনে দিন দিন আখের চাষ কমছে। ফলে আখ অভাবে জয়পুরহাট চিনিকলে চিনি উৎপাদনও কমছে। কৃষকদের অভিযোগ দীর্ঘমেয়াদি ফসল হিসেবে আখের দাম কম, বিক্রির টাকা সহজে না পাওয়াসহ নানা বিড়ম্বনার কারণে তারা আখ চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। আখের পরিবর্তে একই সময়ে তারা তিন থেকে চারটি ফসল চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি, দিন দিন আখ চাষ কমলেও দাম বাড়ানো ও বিক্রির টাকা বিকাশে পরিশোধের পাশাপাশি আখের জমিতে সাথী ফসল চাষসহ প্রযুক্তিগত নানা সুবিধা দেওয়ায় গত দু’বছরে জেলায় আখ চাষ বেড়েছে। আগামীতে এই চাষ আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।image-34074-1640338579

চিনিকল সূত্রে জানা গেছে,গত মাড়াই মৌসুমে (২০২৩-২৪) জেলায় আখ চাষ হয়েছে ২ হাজার ৫ একর জমিতে। যা থেকে চিনিকলে আখ সরবরাহ হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন। চিনিকলে এক মাস মাড়াই করে এই আখ থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন। চিনিকল কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগে গত বছর আখ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ২ একর জমিতে। যা থেকে এবার ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর মাড়াই মৌসুমের (২০২৪-২৫) উদ্বোধন করা হয়েছে। যেখানে ৩ হাজার ২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তবে আখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে আলু সহ অন্য ফসল চাষ করার জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, বীজ ও সারের জন্য ঋণ সুবিধা, আখের মূল্য বৃদ্ধি ও বিকাশের মাধ্যমে আখ বিক্রির টাকা প্রদান ছাড়াও নিয়মিত মোটিভেশনের কারণে এবার সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ১২৩ একর জমিতে আখ রোপণও সম্পন্ন হয়েছে।

চিনিকল সূত্রে জানা গেছে,১৯৬২ সালে প্রথম মাড়াই মৌসুম শুরু করে জয়পুরহাট চিনিকল। আর সেই থেকে আখ চাষে আগ্রহী হয় এলাকার কৃষক। জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে আখ চাষ হওয়ায় চিনিকলটি বছরের প্রায় ৬ মাস আখ মাড়াই করে ২০ থেকে ২৩ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনে সক্ষম হয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি ফসল হিসেবে আখের দাম কম, সময় মতো আখ বিক্রির অনুমতিপত্র (পূর্জি) ও আখ বিক্রির টাকা পরিশোধে চিনিকল কর্তৃপক্ষের নানা হয়রানি ছাড়াও বর্তমানে অন্য ফসলে বেশি লাভ হওয়ায় আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় কৃষকরা। ফলে আখের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকা চিনিকলটিতে চিনির উৎপাদনও কমে গেছে।

দেশের এ বৃহৎ চিনিকলটি স্থাপনের পর শুধু জয়পুরহাট নয় আশপাশের বিভিন্ন জেলা আখ সরবরাহ হতো। এমনকি নাটোর জেলা থেকেও ট্রেনে করে আখ নিয়ে আসা হতো এই চিনিকলে। বছরে ২৩ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের রেকর্ডও আছে এই চিনিকলের। সে সময় শুধু জয়পুরহাট চিনিকল এলাকায় আখ চাষ হয়েছে ১১ থেকে ১২ হাজার একর জমিতে। আর বর্তমানে নানা কাঠখড়ি পুড়িয়ে আখ চাষ হচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার একর জমিতে। অন্য ফসলে বেশি লাভ, আখের দাম কম এবং চিনিকলে নানা বিড়ম্বনার কারণে আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষকরা।

জয়পুরহাট চিনিকল এলাকার কেশবপুর দক্ষিণপাড়ার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আগে বেশি চাষ করলেও এবার ১ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। আখ চাষে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ মাস। সে হিসেবে লাভ হয় না। আবার আখ বিক্রি করে সময় মতো টাকাও পাওয়া যায় না। অথচ অন্য ফসল চাষ করলে লাভ অনেক বেশি হয়। এজন্য আখ চাষ কমে দিয়েছি। একই এলাকার কৃষক শিপন হোসেন ও আজিজুল হক বলেন, সময় মতো চিনিকল থেকে আখ বিক্রির অনুমতিপত্র (পূর্জি) পাওয়া যায় না। ফলে জমিতে আখ শুকিয়ে নষ্ট হয়। চিনিকলে আখ বিক্রি করতে গেলে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। আখ চাষের একই অন্য তিন ফসল উৎপাদন হয়। ফলে লাভও বেশি হয়। এজন্য শুধু আমরা নয় এলাকার অনেক কৃষকই আখ চাষ করছেন না।

জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু তালেব চৌধুরি বলেন, চিনিকলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে আখ চাষকে লাভজনক করতে হবে। যদিও আগের তুলনায় কৃষকরা আখ চাষে বেশকিছু সুবিধা পাচ্ছে। এজন্য গত দু’বছর থেকে আখ চাষও বেড়েছে। তবে উন্নত বীজ সরবরাহের পাশাপাশি আখের দাম বাড়ানো গেলে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

জয়পুরহাট চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) কৃষিবিদ তারেক ফরহাদ বলেন, মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল আখের দাম ৬০০ টাকা এবং মিলের বাইরে ৫৮৭ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পাশাপাশি আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষেও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ অব্যাহত আছে। আশা করছি আগামীতে আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আখ চাষ কম হওয়ায় জয়পুরহাট চিনিকলে উৎপাদন কমছে

আপডেট সময় : ১১:৩১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

লাভজনক না হওয়ায় জয়পুরহাট চিনিকল জোনে দিন দিন আখের চাষ কমছে। ফলে আখ অভাবে জয়পুরহাট চিনিকলে চিনি উৎপাদনও কমছে। কৃষকদের অভিযোগ দীর্ঘমেয়াদি ফসল হিসেবে আখের দাম কম, বিক্রির টাকা সহজে না পাওয়াসহ নানা বিড়ম্বনার কারণে তারা আখ চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। আখের পরিবর্তে একই সময়ে তারা তিন থেকে চারটি ফসল চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি, দিন দিন আখ চাষ কমলেও দাম বাড়ানো ও বিক্রির টাকা বিকাশে পরিশোধের পাশাপাশি আখের জমিতে সাথী ফসল চাষসহ প্রযুক্তিগত নানা সুবিধা দেওয়ায় গত দু’বছরে জেলায় আখ চাষ বেড়েছে। আগামীতে এই চাষ আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।image-34074-1640338579

চিনিকল সূত্রে জানা গেছে,গত মাড়াই মৌসুমে (২০২৩-২৪) জেলায় আখ চাষ হয়েছে ২ হাজার ৫ একর জমিতে। যা থেকে চিনিকলে আখ সরবরাহ হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন। চিনিকলে এক মাস মাড়াই করে এই আখ থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন। চিনিকল কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগে গত বছর আখ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ২ একর জমিতে। যা থেকে এবার ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর মাড়াই মৌসুমের (২০২৪-২৫) উদ্বোধন করা হয়েছে। যেখানে ৩ হাজার ২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তবে আখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে আলু সহ অন্য ফসল চাষ করার জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, বীজ ও সারের জন্য ঋণ সুবিধা, আখের মূল্য বৃদ্ধি ও বিকাশের মাধ্যমে আখ বিক্রির টাকা প্রদান ছাড়াও নিয়মিত মোটিভেশনের কারণে এবার সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ১২৩ একর জমিতে আখ রোপণও সম্পন্ন হয়েছে।

চিনিকল সূত্রে জানা গেছে,১৯৬২ সালে প্রথম মাড়াই মৌসুম শুরু করে জয়পুরহাট চিনিকল। আর সেই থেকে আখ চাষে আগ্রহী হয় এলাকার কৃষক। জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে আখ চাষ হওয়ায় চিনিকলটি বছরের প্রায় ৬ মাস আখ মাড়াই করে ২০ থেকে ২৩ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনে সক্ষম হয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি ফসল হিসেবে আখের দাম কম, সময় মতো আখ বিক্রির অনুমতিপত্র (পূর্জি) ও আখ বিক্রির টাকা পরিশোধে চিনিকল কর্তৃপক্ষের নানা হয়রানি ছাড়াও বর্তমানে অন্য ফসলে বেশি লাভ হওয়ায় আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় কৃষকরা। ফলে আখের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকা চিনিকলটিতে চিনির উৎপাদনও কমে গেছে।

দেশের এ বৃহৎ চিনিকলটি স্থাপনের পর শুধু জয়পুরহাট নয় আশপাশের বিভিন্ন জেলা আখ সরবরাহ হতো। এমনকি নাটোর জেলা থেকেও ট্রেনে করে আখ নিয়ে আসা হতো এই চিনিকলে। বছরে ২৩ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের রেকর্ডও আছে এই চিনিকলের। সে সময় শুধু জয়পুরহাট চিনিকল এলাকায় আখ চাষ হয়েছে ১১ থেকে ১২ হাজার একর জমিতে। আর বর্তমানে নানা কাঠখড়ি পুড়িয়ে আখ চাষ হচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার একর জমিতে। অন্য ফসলে বেশি লাভ, আখের দাম কম এবং চিনিকলে নানা বিড়ম্বনার কারণে আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষকরা।

জয়পুরহাট চিনিকল এলাকার কেশবপুর দক্ষিণপাড়ার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আগে বেশি চাষ করলেও এবার ১ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। আখ চাষে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ মাস। সে হিসেবে লাভ হয় না। আবার আখ বিক্রি করে সময় মতো টাকাও পাওয়া যায় না। অথচ অন্য ফসল চাষ করলে লাভ অনেক বেশি হয়। এজন্য আখ চাষ কমে দিয়েছি। একই এলাকার কৃষক শিপন হোসেন ও আজিজুল হক বলেন, সময় মতো চিনিকল থেকে আখ বিক্রির অনুমতিপত্র (পূর্জি) পাওয়া যায় না। ফলে জমিতে আখ শুকিয়ে নষ্ট হয়। চিনিকলে আখ বিক্রি করতে গেলে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। আখ চাষের একই অন্য তিন ফসল উৎপাদন হয়। ফলে লাভও বেশি হয়। এজন্য শুধু আমরা নয় এলাকার অনেক কৃষকই আখ চাষ করছেন না।

জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু তালেব চৌধুরি বলেন, চিনিকলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে আখ চাষকে লাভজনক করতে হবে। যদিও আগের তুলনায় কৃষকরা আখ চাষে বেশকিছু সুবিধা পাচ্ছে। এজন্য গত দু’বছর থেকে আখ চাষও বেড়েছে। তবে উন্নত বীজ সরবরাহের পাশাপাশি আখের দাম বাড়ানো গেলে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

জয়পুরহাট চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) কৃষিবিদ তারেক ফরহাদ বলেন, মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল আখের দাম ৬০০ টাকা এবং মিলের বাইরে ৫৮৭ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পাশাপাশি আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষেও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ অব্যাহত আছে। আশা করছি আগামীতে আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে।